পত্রলিখন
নানা প্রয়োজনে বড়োদের মতো ছোটোদেরও চিঠি লিখতে হয়। কোনো কারণে বাবা-মা দূর-দূরান্তে গেলে তাদের চিঠি লিখলে তাঁরা খুশি হন । বন্ধুবান্ধবের কাছেও অনেক সময় ছোটোদের চিঠি লিখতে হয়। কখনো কখনো প্রধান শিক্ষকের কাছে আবেদনপত্র লেখার দরকার পড়ে। নিজেরা কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করলে আমন্ত্রণপত্র রচনার কাজও বর্তায় নিজেদের ওপর। তা ছাড়া এলাকার কোনো সমস্যা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সংবাদপত্রে অনেক সময় চিঠি লেখার প্রয়োজন পড়ে। তাই বিভিন্ন ধরনের চিঠি লিখতে জানা, ভাষা শেখার একটা ব্যবহারিক দিক।
চিঠি নানা রকমের হতে পারে। যেমন: ব্যক্তিগত চিঠি, দরখাস্ত বা আবেদনপত্র, নিমন্ত্রণপত্র, সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্যে পত্র, ব্যবসায়িক পত্র, অভিনন্দনপত্র ইত্যাদি। এক এক ধরনের চিঠি লেখার সময়ে এক এক ধরনের নিয়ম বা ছক মেনে চলতে হয়।
১. ব্যক্তিগত চিঠি
বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধুবান্ধবের কাছে যেসব চিঠি লেখা হয় সেগুলো হচ্ছে ব্যক্তিগত চিঠি।এসব চিঠিতে থাকে পড়াশোনা, উৎসব অনুষ্ঠান এবং ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের কথা। এ ধরনের চিঠিতে বিশেষ অভিজ্ঞতা কিংবা সমস্যার কথাও লেখা চলে। এ ধরনের চিঠি এমনভাবে লিখতে হয় যেন পড়তে ভালো লাগে, যেন তা মনকে স্পর্শ করে । অবান্তর বা অপ্রাসঙ্গিক কথা কিংবা দুর্বোধ্য শব্দের আড়ম্বর ঘটলে এ ধরনের চিঠি কৃত্রিম হয়ে পড়ে।
ব্যক্তিগত চিঠির গঠনকাঠামো বা আঙ্গিক: পুরো চিঠির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোন অংশে কী লেখা হয় এবং কোন রীতিতে লেখা হয় তার একটা নির্দিষ্ট ছক আছে। সেই ছককে বলা হয় গঠনকাঠামো বা আঙ্গিক। গঠনকাঠামোর দিক থেকে ব্যক্তিগত চিঠির দুটো অংশ থাকে। যেমন: ক. ভেতরের অংশ, খ. বাইরের অংশ।
ক. চিঠির ভেতরের অংশ: চিঠির ভেতরের অংশ পাঁচটি ভাগে বিভক্ত । যথা:
১. ঠিকানা: চিঠির ডান দিকে ওপরের কোনায়, যেখান থেকে চিঠি লেখা হচ্ছে সেখানকার ঠিকানা লিখতে হবে।
২. তারিখ: ঠিকানার ঠিক নিচে, যে তারিখে চিঠি লেখা হচ্ছে সেই তারিখ দিতে হবে।
৩. সম্ভাষণ: চিঠির বামদিকে, যাকে চিঠি লেখা হচ্ছে তাকে উপযুক্ত সম্ভাষণ করতে হবে। গুরুজন কিংবা সমবয়সী বন্ধু-বান্ধবকে সম্বোধন করার ভাষা আলাদা আলাদা। যেমন:
ক. গুরুজন আত্মীয় হলে: শ্রদ্ধেয় আব্বা, পরম পূজনীয় বাবা, শ্রদ্ধাভাজনীয়াসু মা ইত্যাদি।
খ. গুরুজন আত্মীয় না হলে: মান্যবরেষু, শ্রদ্ধাষ্পদেষু, শ্রদ্ধেয়, শ্রদ্ধাভাজনেসু [মেয়েদের বেলায়: মাননীয়াসু, শ্ৰদ্ধাষ্পদাসু, শ্রদ্ধেয়া, শ্রদ্ধাভাজনীয়াসু ইত্যাদি]
গ. সমবয়সী বন্ধুদের বেলায়: প্রিয় আনিস, প্রীতিভাজন সোহেল, প্রীতিভাজনেষু, বন্ধুবরেষু [মেয়েদের বেলায় প্রিয় নিলীমা, প্রীতিভাজনীয়াসু] ইত্যাদি। এক্ষেত্রে কেবল নাম লিখেও সম্বোধন করা চলে। যেমন: সাজু, তোর পাঠানো চিঠি ও বই গতকালের ডাকে পেয়েছি।
ঘ.সম্পর্কে বা বয়সে ছোটোদের সম্বোধনে: স্নেহের মারুফ, স্নেহভাজন গৌতম, স্নেহাষ্পদেষু, কল্যাণীয় [মেয়েদের বেলায়: স্নেহের নীলা, স্নেহভাজনীয়াসু, কল্যাণীয়াসু] ইত্যাদি।
৪. মূল পত্রাংশ: এরপর এক বা একাধিক অনুচ্ছেদে চিঠির মূল বক্তব্য গুছিয়ে লিখতে হয়। বক্তব্যের প্রথমে বা শেষে কুশল সংক্রান্ত প্রশ্ন (কেমন আছ ?) বা প্রত্যাশা [আশা করি, তোমরা সবাই ভালো আছ] থাকতে পারে।
৫. বিদায় সম্ভাষণ ও নাম স্বাক্ষর: বক্তব্য শেষ হলে চিঠির শেষ দিকে সমাপ্তিসূচক পদ সালামান্তে, প্রণামান্তে, শুভেচ্ছান্তে ইত্যাদি লেখা হয়। তারপর সম্পর্ক অনুসারে বিনীত, স্নেহধন্য, প্রীতিধন্য, প্রীতিমুগ্ধ, (মেয়েদের বেলায়: বিনীতা, স্নেহধন্যা, প্রীতিধন্যা, প্রীতিমুগ্ধা), তোমারই, তোরই, আপনারই, শুভাকাঙ্ক্ষী বা শুভার্থী লিখে তার নিচে নিজের নাম লেখা হয়। আগে এক্ষেত্রে ইতি লেখা হতো। এখন অনেকেই লেখেন না।
লক্ষণীয়:
১. আগে চিঠির ওপরে ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় নিজের ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী মঙ্গল শব্দ (এলাহি ভরসা, খোদা ভরসা, আল্লাহ মহান, পরম করুণাময় আল্লাহর নামে, ওঁ, শ্রীদুর্গা সহায় ইত্যাদি) লেখা হতো। আধুনিক রীতি অনুযায়ী আজকাল চিঠিতে এগুলো খুব কমই লেখা হয়।
২. আধুনিক রীতিতে এবং কম্পিউটারে অক্ষরবিন্যাসের ক্ষেত্রে চিঠিপত্রে বাম-ঘেঁষা পক্তিবিন্যাসের (Left Alignment) রীতি অনুসরণ করা হয়। তবে এক্ষেত্রে ব্যক্তিগতপত্রে পত্রলেখকের কিছুটা স্বাধীনতা রয়েছে। পত্রলেখক ইচ্ছা করলে হাতে লেখা পত্রে উক্ত রীতি অনুসরণ নাও করতে পারেন।
খ.চিঠির বাইরের অংশ: চিঠির বাইরে খামের বা পোস্টকার্ডের ডানদিকে প্রাপকের (যিনি পাবেন তাঁর) নাম ও ঠিকানা লিখতে হয়। আর বাঁ দিকে লিখতে হয় প্রেরকের (যিনি চিঠি পাঠাচ্ছেন তাঁর) নাম। বাংলাদেশে বা পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষায়ই ঠিকানা লেখা চলে। তবে সাধারণভাবে বিদেশে চিঠি লিখলে ঠিকানা ইংরেজিতে লেখা উচিত। এক্ষেত্রে খামের ওপরে ইংরেজিতে BY AIRMAIL লিখতে হবে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ পত্র লিখন
শিক্ষার্থীরা আজকে আমরা জানলাম পত্র লিখন সম্পর্কে । যদি আজকের এই পত্র লিখন লেখাটি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ । Search-Asked BD
Post a Comment