এই বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা টি যেকোন ক্লাসের জন্য। যারা ক্লাস ৭ম শ্রেনীতে আছে তাদের জন্যও এই বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা টি। আবার ক্লাস দশম শ্রেনীতে আছো তাদের জন্য এই বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা । অর্থাৎ ক্লাস ৭ম শ্রেনী থেকে ১০ম দশম শ্রেনী পর্যন্ত সবার প্রযোজ্য এই বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা । রচনাটি পড়ার আগে তোমরা রচনা লেখার নিয়ম ও সুচিপত্রটি দেখা নাও।
সুচিপত্র: বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা | রচনা বাংলাদেশের ষড়ঋতু
- সূচনা
- বাংলাদেশের ঋতুভেদে
- তাপদগ্ধ গ্রীষ্ম
- শুভ্র শরৎ
- ধূসর হেমন্ত
- শরৎকাল
- হেমন্তকাল
- ঋতুরাজ বসন্ত
- উপসংহার
বাংলাদেশের ষড়ঋতু
সূচনা: বাংলাদেশ ছয়টি ঋতুর দেশ। ভিন্ন ভিন্ন রূপবৈচিত্র্য সঙ্গে করে এ ছয় ঋতু বার বার ঘুরে আসে। প্রতিটি ঋতুই চির নতুন, চির ঐশ্বর্যময়। এমন বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি খুব কম দেশেই আছে। ষড়ঋতুর কল্যাণেই বাংলাদেশ সারাবছর সেজে থাকে অপরূপ সাজে।
বাংলাদেশের ঋতুভেদ: ঋতু পরিক্রমায় বাংলায় আসে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। মোটামুটি দুই মাস করে এক একটি ঋতু। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ গ্রীষ্মকাল, আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল, ভাদ্র-আশ্বিন শরৎকাল, কার্তিক-অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল, পৌষ-মাঘ শীতকাল এবং ফাল্গুন-চৈত্র বসন্তকাল। তবে এ ঋতু পরিক্রমা সব সময় যে মাসের সীমারেখা মেনে চলে তেমন নয়। তবু বাংলার প্রকৃতি আর মানুষের জীবনযাত্রার ধরন বিন্যস্ত হয় এ ঋতু পরিক্রমাকে কেন্দ্র করেই। বাংলার ঋতুর রূপবৈচিত্র্যে মুগ্ধ কবি আবেগভরে লেখেন:
'ঋতুর দল নাচিয়া চলে
ভরিয়া ডালি ফুলে ও ফলে'
তাপদগ্ধ গ্রীষ্ম: গ্রীষ্মের দারুণ তাপে দগ্ধ হয় প্রকৃতি। নদী শুকিয়ে যায়, মাঠে ফাটল ধরে, ঠান্ডা পানি ও ঠাণ্ডা বাতাসের জন্যে সবার প্রাণ ছটফট করে। এ সময় আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুর মতো রসালো ফলে ভরে ওঠে প্রকৃতির অঙ্গন। মধুমাসের মিষ্টি ফল খেয়ে আমাদের মন তৃপ্ত হয়। আবার হঠাৎ করে আসে কালবৈশাখীর ঝড়। তবু বৈশাখ আমাদের জীবনে আসে নতুন বছরের শুভ বার্তা নিয়ে । পয়লা বৈশাখে আমরা উদযাপন করি বাংলা নববর্ষ। মেঘমেদুর বর্ষা: বর্ষায় বাংলার প্রকৃতি সাজে নতুন রূপে। বজ্রের শব্দ আর বিজলির ছটা মুগ্ধতার আবেশ ছড়ায়। দিনরাত অবিরাম বর্ষণে খালবিল, মাঠঘাট ভেসে যায় পানিতে। প্রকৃতি হয়ে ওঠে সবুজ, শ্যামল, স্নিগ্ধ, সজল। কেয়া আর কদম ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বৃষ্টিতে ভিজে ধান ও পাটের চারা বোনে কৃষ
শুভ্র শরৎ: মেঘ আর রোদের লুকোচুরি খেলায় মেতে শরৎ আসে শুভ্র সৌন্দর্য নিয়ে। নীল আকাশে ভেলার মতো ভাসে সাদা মেঘ। নদীর কিনারা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সাদা কাশফুলের ঢেউ খেলানো হাসিতে। শাপলা, পদ্ম, শিউলি, টগর, কামিনী আর জুঁই ফুলে ছেয়ে যায় চারদিক। শরৎ বাংলার প্রকৃতিকে সাজিয়ে দেয় রুপালি রঙে।
ধূসর হেমন্ত: হেমন্ত আসে চুপিসারে। তার গায়ে থাকে হালকা কুয়াশার চাদর। নতুন ধানের গন্ধে বাতাস ভরে যায়। শুরু হয় ফসল কাটা আর নবান্নের উৎসব। কৃষকের গোলা ভরে ওঠে সোনালি ধানে।রিক্ত শীত: শীতে প্রকৃতিতে লাগে শিহরন। গাছের সবুজ পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়তে শুরু করে। শুষ্ক প্রকৃতিতে লাগে রিক্ততার ছোঁয়া। এর মধ্যেও সরষে খেতে হলুদ রঙের বাহার ও হলুদবরণ গাঁদা ফুলের সমারোহ ঘটে চারদিকে। খেজুরের রস ও তাজা শাকসবজিতে ভরে যায় চারপাশ। পৌষে ক্ষীর, পায়েস আর পিঠাপুলির উৎসবে মেতে ওঠে গ্রামবাংলা। শীতে গরিব-দুঃখী মানুষের প্রচণ্ড কষ্ট হয়।
ঋতুরাজ বসন্ত: বসন্তে বাংলার প্রকৃতি রঙিন হয়ে ওঠে। নানা ফুলে ভরে যায় চারদিক। শিরীষ, কাঞ্চন, কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়ার ছটায় চোখ জুড়িয়ে যায়। শীতের কুয়াশা সরে গিয়ে তাজা ঝলমলে রোদে হেসে ওঠে প্রকৃতি । দখিনা বাতাস বুলিয়ে দেয় স্নিগ্ধতার পরশ। গাছের ডালে ডালে নতুন পাতার দোলা লাগে। আমের গাছ ছেয়ে যায় মুকুলে। বন-বনানী আর বাগান ছেয়ে যায় ফুলে ফুলে। মালতী-মল্লিকা, জুঁই, শিমুল, চাঁপা, করবী ফুলের যেন কোনো শেষ নেই। ফুল থেকে ফুলে নেচে বেড়ায় রং-বেরঙের প্রজাপতি আর মৌমাছি। কোকিলের কুহু কুহু রবে মন ভরে যায়।
উপসংহার: ছয়টি ঋতুর পালাবদলে নানা সাজে সেজে ওঠে সুন্দরী বাংলার মোহনীয় প্রকৃতি। এই পালাবদলের ছোঁয়ায় প্রকৃতিতে নতুনের দোলা লাগে। আমাদের জীবন ভরে ওঠে নানা অনুভূতিতে।
সুচিপত্র: বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা |
- ভূমিকা
- গ্রীষ্মের আগমন
- বর্ষার সমারোহ
- শরতের আগমন
- বসন্ত
- উপসংহার
ষড় ঋতুর বাংলাদেশ
ভূমিকা :
“জগতের মাঝে কত বিচিত্র তুমি হে!
তুমি কত বিচিত্র রূপিনী।”
-কবির এ কবিতা ছত্রের বাস্তব রূপায়ণ আমরা খুঁজে পাই বাংলাদেশের ষড়ঋতুর রূপবৈচিত্র্যের মধ্যে। অপরূপ রূপ এবং অফুরন্ত সম্ভার নিয়ে এখানে একের পর এক আবর্তিত হয় ছয়টি ঋতু। পৃথিবীর আর কোনো দেশে ছয় ঋতুর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু বাংলাদেশে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত এই ছয়টি ঋতুর পালাবদলের খেলা চলে। এদেশে ঋতু পরিবর্তনের বর্ণ, বিচিত্র ধারা পথের অনুসরনে নিয়ত উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে তার অর্ন্তহীন রূপের খেলা রঙের খেলা। প্রাকৃতিক পরিবর্তনের সঙ্গে সুর-ছন্দ-লয় মিলিয়ে চলে ঋতুর পর ঋতুর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। প্রতিটি ঋতু এখানে তার আপন বর্ণময় সঙ্গীতময় রূপ; স্বাতন্ত্র্যের ডালি নিয়ে আসে, প্রকৃতিকে সাজায় তার বৈচিত্র্যবিলাসী স্বাতন্ত্র্যের অনুপম রূপসজ্জায় । রূপের ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে বাংলাদেশ।
গ্রীষ্মের আগমন : ভয়ানক রুক্ষতা নিয়ে গ্রীষ্মকালের আগমন হয় । প্রখর বহ্নিজ্বালা নিয়ে তার রুদ্র আবির্ভাব প্রাণহীন প্রকৃতি । শুষ্ক চৌচির বক্ষ । শ্যামলতাহীন রুক্ষ মরুর ধূসরতার বৈশিষ্ট্য চারিদিকে। আর এই ধূসর রুক্ষতা নিয়েই গ্রীষ্মের নিষ্করুণ প্রকৃতি এক মৌনি তাপস। এই চরম প্রতিকূলতার মাঝেও কৃষকেরা তবু মাঠে মাঠে পাট ও আউশ ধানের বীজ বপণ করে। সমস্ত শরীর তাদের ঘামে ভিজে যায়। পিপাসায় ছাতি ফেটে যায় । বৃষ্টিহীন আকাশের দিকে তাকিয়ে চাতক পাখি তখন ‘দে-জল দে-জল’ বলে চিৎকার করে। প্রচণ্ড উত্তাপের কারণে এ সময় বায়ুমণ্ডলে মারাত্মক শূন্যতার সৃষ্টি হয় এবং এরই ফলে শুরু হয় কাল বৈশাখীর তাণ্ডবলীলা । ঈশান কোণ থেকে অন্ধ বেগে ধেয়ে আসে মেঘ।কালবৈশাখীর ঝড়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মধ্যে আম কুড়ানোর ধুম পড়ে যায় । গ্রীষ্মের খর রৌদ্রের যে দাহ মানুষের জীবনকে ক্লান্ত ও পঙ্গু করেছিল, বর্ষার সজল বারি-বর্ষণে তা দূর হয়ে যায়, তাপদগ্ধ মানুষের মুখে হাসি ফোটে ।
বর্ষার সমারোহ :গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহ, কালবৈশাখীর তাণ্ডব এবং সুস্বাদু ফলের অফুরন্ত সমারোহ শেষে বীণা বাজিয়ে রিমঝিম বর্ষা আসে। এ সময় নিবিড় কালো মেঘ ভাসতে থাকে দিগন্ত থেকে দিগন্তে । প্রকৃতির বাতাসে তখন বাদল বাতাসের অশান্ত মাতামাতি শুরু হয় । একটানা বরিষণে স্নাত হয় পৃথিবী । বৃষ্টির জলে তৃষ্ণার্ত পৃথিবী শান্ত হয় । সে আবার স্নিগ্ধ শ্যামলিমায় ভরে ওঠে। বর্ষার অবিরল অবিচ্ছিন্ন ধারায় ভরে যায় বাংলার সমস্ত খাল-বিল, নদী-নালা। মরালের দল সানন্দে পানিতে সন্তরণ করে, মৎস্যরাজি জলাশয়ে ইতস্তত বিচরণ করে। কুমুদ, কনক প্রভৃতি পুষ্পরাজি প্রস্ফুটিত হয় এবং বনের যুথী, কেয়া, কদম ফুল ফোঁটে। পল্লী প্রকৃতির রূপটি বর্ষার ফুঠে ওঠে:
“ভোর থেকে আজ বাদল ছুটেছে—আয় গো আয়
কাঁচা রোদখানি পড়েছে বনের ভিজে পাতায়॥
ঝিকিমিকি করে কাঁপিতেছে বট-
পথের দুধারে শাখে শাখে আজি পাখিরা গায়
শরতের আগমন ঃবর্ষণক্লান্ত লঘুভার মেঘ অলস মন্থর ছন্দে নিরুদ্দেশে ভেসে যায় শরতে । ভাদ্র-আশ্বিনে তার বিচিত্রলীলা । বৰ্ষণ-ধৌত মেঘমুক্ত আকাশের সুনীল রূপ কান্তি আলোছায়ার লুকোচুরি, শিউলী ফুলের মন উদাস করা গন্ধ, নদী তীরে কাশফুলের অপূর্ব সমারোহ, প্রভাতে তৃণ পল্লবে নব শিশিরের আলপনা। আর প্রভাত সূর্যের রশ্মিপাত ও শুভ্র জ্যোৎস্না পুলকিত রাত্রি এই অনুপম রূপ মাধুরী নিয়ে নিয়ে বাংলাদেশের শরৎ নিজেকে প্রকাশ করে। এ সময়ে সবুজ
মাঠের হাতছানি মনকে আনন্দে ভরে দেয় । কবির ভাষায়-
“শরৎ, তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি
ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙ্গুলি।।
শরৎ তোমার শিশির ধোওয়া কুণ্ডলে
বনের পথে লুটিয়ে পড়া অঞ্চলে,
আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি ।।”
হেমন্ত : শরৎ বিদায়ের সঙ্গে-সঙ্গেই হেমন্তের আবির্ভাব। হিম কুয়াশা জালে আশ্বিনের রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশ ধূসর বর্ণ ধারণ করে। তখন প্রকৃতির শোভা অপরূপ সুন্দর দেখায়। প্রকৃতি যেন আপনরূপে মুগ্ধ হয়ে মিশকালো শিশির বিন্দুচ্ছলে আনন্দাশ্রু বিসর্জন করে। কৃষকের উঠোনে সোনার ধান ভরে দিয়ে শিশির নিঃশব্দ চরণে বিদায় নেয় শরৎ। শরৎ রাতের আকাশে ছড়িয়ে দেয় অপরূপ জ্যোস্না
“বকুল ডালের আগায়-জ্যোস্না যেন ফুলের স্বপন লাগায়
কোন গোপনে কানাকানি পূর্ণশশী ওই যে দিল আনি।”
শীতের আগমন : হেমন্তের প্রৌঢ়ত্বের পর আসে জরাগ্রস্ত শীতের ধূসর বার্ধক্য। পৌষ মাসের পরিসীমায় শুষ্ক-কাঠিন্য, পরিপূর্ণ রিক্ততা ও দিগন্তব্যাপী সুন্দর বিষাদের প্রতিমূর্তি এই শীত ঋতু। তার তাপ-কিরণ রূপমূর্তির মধ্যে প্রচ্ছন্ন থাকে এই মহামৌন তাপসীর সাধনা। এক সীমাহীন রিক্ততায় অসহায় ডালপালাগুলি একদিন হাহাকার করে কেঁদে ওঠে । নিজেকে সব রিক্ত করে উজাড় করে দিতে হয়। ফসল তোলা মাঠে দিগন্তব্যাপী কি সীমাহীন শূন্যতা বিরাজ করে। শীতের রবিশস্য আনে প্রাচুর্য। পৌষের পিঠে আর মাঘের খেঁজুরের রস ঘরে ঘরে আনে উৎসবের সমারোহ। কবির বর্ণনায় শীতের রূপটি এভাবে ফুটে ওঠে।
“শীতের হাওয়ায় লাগল নাচন আমলকীর এই ডালে ডালে
পাতাগুলি শির শিরিয়ে ঝরিয়ে দিল তালে তালে ।।
উড়িয়ে দেবার মাতন এসে কাঙ্গাল তারে করল শেষে
তখন তাহার ফুলের বাহার রইল না আর অন্তরালে ॥”
বসন্ত : অবশেষে ঋতুরাজ বসন্ত অনুপম নৈসর্গিক সৌন্দর্য লয়ে আবির্ভূত হয়। এ সময় নতুন পত্র-পুষ্পে, লতাগুল্মে, শীতের শ্রীহীনতা দূর হয়ে যায়। নানা প্রকার ফুল ফোটে এবং আম-কাঁঠাল প্রভৃতি রসাল ফলের মুকুল বের হয় ৷ মৌমাছি মধুমক্ষিকা গুন গুন রবে ফুল হতে মধু আহরণ করে। আম্র কাননের অভ্যন্তরে কোকিল সুমধুর কণ্ঠে 'কুহু' কুহু ধ্বনি করে সবার মন প্রাণচঞ্চল করে তোলে। বসন্ত ঋতুর দৃশ্য পরম প্রীতিদায়ক এবং উপভোগ্য । মানুষ বসন্তকে বরণ করে বলে,
“আজ দখিন দুয়ার খোলা
এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো।
দিক হৃদয় দোলায় দোলা
এসো হে, এসো হে, এসো হে । আমার বসন্ত এসো।”
উপসংহার : বাংলাদেশের ছয়টি ঋতু আপন আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। ঋতুর বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যে বাংলাদেশ নব নব সাজে সজ্জিত হয়। এই ছয়টি ঋতুর প্রত্যেকটির যে নিজস্ব সৌন্দর্য রয়েছে, তা বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ। এদেশের সৌন্দর্য পিয়াসী মানুষ প্রাণভরে লুফে নিচ্ছে বিভিন্ন ঋতুর আস্বাদ। এই সৌন্দর্যকে বুকে ধারণ করে তারা হয়ে ওঠছে কবি ।
সুচিপত্র: বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা |
- ভূমিকা
- গ্রীষ্ম
- বর্ষা
- শরৎ
- হেমন্ত
- শীত
- বসন্ত
- উপসংহার
বাংলাদেশের ষড়ঋতু
অথবা
বাংলাদেশের নিসর্গে ষড়ঋতুর প্রভাব
অথবা
বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য
ভূমিকা: অপরূপ রূপময়ী দেশ আমাদের এ বাংলাদেশ। ঋতুতে ঋতুতে তাঁর দিগন্ত জুড়ে রূপের মেলা বসে। আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতির প্রেরণায় পৃথিবী তার সূর্য পরিক্রমার পথে অগ্রসর হয়ে চলে। তার সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে চলে ঋতুর পর ঋতুর এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। ঋতু বৈচিত্র্যের এমন অপরূপ প্রকাশ বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও তেমন দেখা যায় না। তাই জীবনানন্দ দাশ বাংলাদেশকে বলেছেন- ‘রূপসী বাংলা'। প্রতিটি ঋতু এখানে প্রকৃতিকে সাজায় তার অনুপম রূপসজ্জায়; তারপর তার সেই রূপ আবার মুছে দিয়ে বিদায় নেয় । এক ঋতু যায়, আসে অন্য ঋতু।
গ্রীষ্ম: বাংলাদেশের প্রকৃতির রঙ্গশালার প্রথম ঋতু গ্রীষ্ম। ধূধূ রুক্ষ দুই চোখে প্রখর অগ্নিদাহ নিয়ে আবির্ভাব ঘটে এ রুদ্র তাপসের। সর্বত্রই যেন বিস্তৃত মরুভূমির তপ্ত প্রান্তর। সমগ্র জীবজগৎ ও উদ্ভিদ জগতে নেমে আসে এক প্রাণহীন, রসহীন বিবর্ণতার পাণ্ডুর ছায়া। এসময়েই প্রকৃতিকে তোলপাড় করে দিয়ে যায় কালবৈশাখীর ভয়াল ছোবল। তার সেই রুদ্র মূর্তি, সেই ভীষণ রূপ দেখা যায় শুধু বাংলাদেশের আকাশেই। এসময় দুপুরটা দারুণ গরমে মাঝে মাঝে দুঃসহ হয়ে ওঠে, তবে রাত্রিটা ভারি মনোরম। পাকা আমের বৈভব আছে গ্রীষ্মকালে। আছে কালো জামের নিবিড় প্রাচুর্য ।
বর্ষা: বাংলাদেশে বর্ষা আসে মহা সমারোহে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিকাশ ও গুরুগম্ভীর বজ্রধ্বনির ‘অতি ভৈরব হরষে'র মধ্যে সূচিত হয় তার শুভাগমন। আকাশের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত ঘন কালো পুঞ্জিভূত মেঘের আনাগোনা দেখা যায়। দিগন্তের ওপার হতে বন্ধনহীন বায়ুপ্রবাহ দুরন্ত বেগে ছুটে আসে, শুরু হয় শীতল ধারাবর্ষণ। শুষ্ক প্রান্তর, মাঠ-জলাশয়, নদীনালা, খালবিলে অনেকদিন পরে জাগে প্রাণের প্রবল উচ্ছ্বাস। প্রকৃতির সব অঙ্গ হতে গ্রীষ্মের ধূসর ক্লান্তি মুছে যায়, উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে সজল বর্ষার নয়ন-রঞ্জন রূপশ্রী। পুষ্প সৌরভের ঐশ্বর্যে চারদিক কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। রিমঝিম বর্ষা দিনরাত আমাদের কানে যেন সেতার বাজিয়ে চলে। আমাদের মন এসময় হয়ে ওঠে মেঘের সঙ্গী। বর্ষার সংগীত রিমঝিম বাজে, আর দেখতে দেখতে সবুজ হয়ে ওঠে ধরিত্রী। তারপর শেষ বর্ষণের পালাগান গেয়ে পথে পথে কদম্ব কেশরের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলে, বাংলার পল্লি-প্রকৃতিকে হাসিয়ে-কাঁদিয়ে সুন্দরী বর্ষা বিদায় গ্রহণ করে।
শরৎ: বর্ষার বিদায়ের পর আবার বঙ্গ প্রকৃতির রূপের রঙ্গমঞ্চে ঘটে পট পরিবর্তন। বর্ষণ ক্ষান্ত লঘুভার মেঘ অলস-মন্থর ছন্দে নিরুদ্দেশে ভেসে চলে। বর্ষণ-ধৌত, মেঘমুক্ত আকাশের সুনীল রূপ-কান্তি, আলো-ছায়ার লুকোচুরি, শিউলি ফুলের মন-উদাস করা গন্ধ, নদী তীরে কাশফুলের অপূর্ব সমারোহ, এ অনুপম রূপশ্রী নিয়ে ঘটে শারদ লক্ষ্মীর আনন্দময় আবির্ভাব। রুপালি জ্যোৎস্নার অপরূপ রথে চড়ে যেন শারদ লক্ষ্মীর ঘটে মর্ত্যাগমন। চারদিকে সৌন্দর্যের দরজা খুলে যায়, বাংলাদেশের রূপ-লাবণ্য যেন কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। সোনার রং ধরে শরতের রোদ্দুরে। আসে শারদীয় উৎসব। হিন্দু সম্প্রদায় দুর্গা পূজার আনন্দে মেতে ওঠে।
হেমন্ত: শরতের পরেই আসে হেমন্ত। কিন্তু হেমন্তের নেই শরতের মতো বর্ণ বাহার, আছে সুদূর ব্যাপ্ত বৈরাগ্যের গভীর বিষণ্নতা। হেমন্ত যেন ধবল কুয়াশার আবরণে মুখ ঢেকে এক নিঃসঙ্গ সাধনায় মগ্ন থাকে। আর সেই সাধনা তার ফসল ফলাবার সাধনা। মাঠে মাঠে ধান পাকে। ক্ষেতে-খামারে হেমন্তের রাশি রাশি ভারা ভারা সোনার ধান উঠতে থাকে। কৃষকের সময় কাটে এক অন্তহীন কর্মব্যস্ততার মধ্যে। হেমন্তের ভূষণ নেই। তার ফুলের বাহার নেই, সৌন্দর্যের জৌলুস নেই, রূপসজ্জারও নেই অফুরন্ত প্রাচুর্য; কিন্তু আছে মমতাময়ী নারীর এক অনির্বচনীয় কল্যাণী রূপশ্রী। নিশির শিশিরে সিক্ত হয় সবুজ ঘাস, গুল্মলতা ও বৃক্ষরাজি। রুপালি হেমন্ত মানবমনে বয়ে নিয়ে আসে আনন্দ, তারপর শিশিরের নিঃশব্দ চরণে সেও একদিন নেয় বিদায়।
শীত: হেমন্তের প্রৌঢ়ত্বের পর আসে জড়তাগ্রস্ত শীতের নির্মম বার্ধক্য। শুষ্ক কাঠিন্য ও রিক্ততার বিষাদময় প্রতিমূর্তিরূপে শীতের আবির্ভাব ঘটে। তার হিমশীতল রূপমূর্তির মধ্যে প্রচ্ছন্ন রয়েছে তপস্যার কঠোর আত্মপীড়ন এবং বৈরাগ্যের ধূসর মহিমা। এ সময়ে ধান কাটা মাঠে কী সীমাহীন শূন্যতা, কী বিশাল কারুণ্য! তারপরও ঘরে ঘরে আনন্দ। কনকনে শীতের তীব্রতায় খেজুর রসের মিষ্টি মধুর আবেশে শিশিরভেজা ভোরের উদীয়মান রবির কিরণ বাড়ির উঠোনকে যখন আলোকিত করে, তখন রোদে পিঠ ফিরিয়ে বাড়ির আঙিনায় পিঠা-পায়েস ও মুড়কি-মোয়ার আনন্দে সবাই আস্বাদন করে শীতের রূপবৈচিত্র্যকে। সর্বত্যাগী শীত তার সর্বস্ব ত্যাগ করে আমাদের পূর্ণ করে দিয়ে নীরবে চলে যায়। ত্যাগের কী অপরূপ মহিমা! এ ত্যাগের অপরূপ মহিমায় তার সর্বাঙ্গ ভাম্বর।
বসন্ত: বসন্তের আবির্ভাবকে সম্ভব করে তুলবার জন্যেই মৌন-তাপস শীতের যেন কঠোর তপস্যা। আসে ঋতুরাজ বসন্ত, আসে পুষ্পমালা বিরচনের লগ্ন। দক্ষিণের মৃদুমন্দ বাতাসের যাদুস্পর্শে শীতের জরাগ্রস্ত পৃথিবীর সর্বাঙ্গে লাগে অপূর্ব শিহরণ। বাতাসের মর্মর ধ্বনির এবং দূর ব্যান্তরাল থেকে ভেসে আসা কোকিলের কুহু গীতি পৃথিবীতে অনুরাগের প্লাবন ছোটায়। শিমুল কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম উচ্ছ্বাসে, মধু-মালতী ও মাধবী মঞ্জুরীর গন্ধ ও বর্ণের তুমুল কোলাহলে লেগে যায় এক আশ্চর্য মাতামাতি। তার উজ্জ্বল বর্ণ ও গন্ধের আবির্ভাবে শূন্যতার অবসান হয়। অফুরন্ত প্রাণ-বন্যায় মেতে ওঠে মানুষ ও প্রকৃতি। আবার শেষ-বসন্তে তার এ বর্ণ বিলাস, প্রাণ-প্রাচুর্যের জোয়ারে আসে ভাটা। গ্রীষ্মের জন্যে ক্ষেত্র প্রস্তুত করে ঋতুরাজ বসন্ত নেয় বিদায়।
উপসংহার: রূপসী বাংলার এ রকম বিচিত্র ঋতুচক্র নানা বর্ণ-গন্ধ গানের সমারোহ নিয়ে নিত্য আবর্তিত হচ্ছে। এক ঋতু যায়, আসে আরেক ঋতু। বাংলাদেশের রূপসাগরে লাগে ঢেউ। কিন্তু শহরবাসী ও শহরমুখী বাঙালি আজ আর অন্তরে তার নিমন্ত্রণ অনুভব করে না। আজ আমরা প্রকৃতিকে নির্বাসিত করে বরণ করে নিচ্ছি উগ্র নাগরিকতার তপ্ত নিঃশ্বাস। কিন্তু উপেক্ষিত প্রকৃতি একদিন না একদিন হয়তো এর প্রতিশোধ নিতে চাইবে।
সুচিপত্র: বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা
- ভূমিকা
- ঋতুর বর্ণনা
- গ্রীষ্মের আগমন
- বর্ষা
- শরৎ
- হেমন্ত
- শীতের পালা
- ঋতুরাজ বসন্ত
- উপসংহার
বাংলাদেশের ষড়ঋতু
অথবা
বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য
ভূমিকা:
“আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি
তুমি এই অপরূপ রূপে বাহির হলে জননী।
ওগো মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফেরে।”
অপরূপ রূপময়ী বাংলাদেশ ঋতুতে ঋতুতে তার দিগন্তের সীমানায় রূপের মেলা বসে। আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতির প্রেরণায় পৃথিবী তার সূর্য পরিক্রমার পথে অগ্রসর হয়। তারই সাথে ছন্দ মিলিয়ে ঋতুর পর ঋতুর এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা । আর ঋতু বৈচিত্র্যের এই শোভাযাত্রা বাংলাদেশে ছাড়া অন্যকোনো দেশে তেমন মনোরম দেখা যায় না। তাই জীবনানন্দ দাশ বাংলাদেশকে রূপসী বাংলা বলেছেন। ঋতুরঙ্গে প্রকৃতি সেজে ওঠে বিচিত্র সাজে, বঙ্গজননীর এই অপূর্ব সৌন্দর্যলীলা যেমন বাঙালিকে করে তুলেছে সৌন্দর্যরসিক, ভাবুক এবং দার্শনিক কবি স্বভাবসম্পন্ন । বাংলার প্রকৃতি বিভিন্ন ঋতুতে উদঘাটন করে নব নব সৌন্দর্যের কল্লোল, এনে দেয় বাঙালি প্রাণে আনন্দের বার্তা।
ঋতুর বর্ণনা : বছরের প্রতি দু’মাসে একটি ঋতু । যথা : বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যে মিলে গ্রীষ্মকাল, আষাঢ়-শ্রাবণে বর্ষাকাল, ভাদ্র-আশ্বিনে শরৎকাল, কার্তিক-অগ্রহায়ণে হেমন্তকাল, পৌষ-মাঘে শীতকাল এবং ফাল্গুন-চৈত্র এ দু'মাস বসন্তকাল । নিচে বিভিন্ন ঋতুর বর্ণনা করা হলো।
গ্রীষ্মের আগমন : বাংলাদেশের প্রকৃতির রঙ্গশালার প্রথম ঋতু হিসেবে বৈশাখের তপ্ত মাঠে কাঠফাটা রোদ নিয়ে গ্রীষ্মের সূচনা হয় । ধু-ধু রুক্ষতা আর প্রখর অগ্নিদাহ নিয়ে এ রুদ্র তাপসের আগমনে সর্বত্রই মরুভূমির ন্যায় ধু-ধু বিস্তার করে । প্রখর রৌদ্রে মাঠ-ঘাট খাঁ-খাঁ করে, আকাশ-বাতাস ধূলায় ধুসরিত হয় । কৃষক এরকম তপ্ত রৌদ্রে পাট ও আউশ ধানের বীজ বপন করতে এসে পিপাসায় পানির অভাবে ছটফট করতে থাকে। প্রচণ্ড উত্তাপে বায়ুমণ্ডলে শূন্যতা সৃষ্টির ফলে শুরু হয় কালবৈশাখীর তাণ্ডবলীলা। আর তখনই বাংলা মা তার সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলিমা হারিয়ে ফেলে। খাল-বিল শুকিয়ে চৌচির হয়ে যায়। তৃষিত চাতক শূন্যে তাকিয়ে হাহাকার করতে
থাকে এক ফোঁটা পানির জন্য। কবির ভাষায়-
“ঘাম ঝরে দরদর গ্রীষ্মের দুপুরে,
মাঠ ঘাট চৌচির জল নেই পুকুরে।”
তবে এত প্রতিকূলতার মধ্যেও বাঙালি তৃপ্ত হয় আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, তরমুজের মতো বিভিন্ন প্রকারের রসালো ফল পেয়ে । এখানে সেখানে নিভৃতে ফুটে থাকে বকুল, টগর ও বেলি ফুল
বর্ষা : বর্ষা আসে ডামাডোল পিটিয়ে কালো মেঘের পাখায় চড়ে রাজ সমারোহে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিকাশ ও গুরুগম্ভীর বজ্রধ্বনির অতি বৈভব হরষের মধ্যে সূচিত হয় তার শুভাগমন। বর্ষার আগমনে শীতল ধারা বর্ষণের শুরু হয়। ফলে তৃষ্ণাতুর তাপিত ধরণীর বুক সুস্নিগ্ধশ্যাম সমারোহে ভরে ওঠে। শুষ্ক প্রান্তর, মাঠ-জলাশয়, নদীনালা, খালবিলে জাগে প্রাণের উচ্ছ্বাস। রিমঝিম বর্ষা দিনরাত আমাদের কানে যেন সেতার বাজিয়ে চলে। আমাদের মন হয় মেঘের সঙ্গী। কবির ভাষায়-
“মন মোর মেঘের সঙ্গী
উড়ে চলে দিগদিগন্তের পানে,
নিঃসীম শূন্যে শ্রাবণ বর্ষণ সঙ্গীতে
রিমঝিম রিমঝিম রিমঝিম।”
এ সময় আকাশ প্রায়ই মেঘাবৃত থাকে এবং সূর্য প্রায় অদৃশ্য থাকে। জুঁই, চাঁপা ও কদম ফুল এ সময়ের শোভা বৃদ্ধি করে ।
শরৎ :বর্ষার বিদায়ের পর আবার বঙ্গ প্রকৃতির রূপের রঙ্গমঞ্চে ঘটে পট-পরিবর্তন। ঋতুচক্রের সবচেয়ে স্নিগ্ধ ঋতু শরৎ। শরতের স্নিগ্ধ শ্যামলিমা সমগ্র প্রকৃতিকে অপূর্ব শুভ পোশাক পরিয়ে দেয়। আকাশে শুভ্র মেঘ বলাকার মতো ভাসতে থাকে এবং সোনালী সকালে শিশির ভেজা ঘাস রোদের ছোঁয়ায় হীরকের মতো ঝকঝক করে। মাঠে মাঠে চির সবুজের পরশ দিয়ে শোভা বিস্তারকারী নদী বয়ে চলে এবং নদীর দুই তীরে সাদা কাশফুল ফুটে থাকে সাদা চাদরের মতো। শেফালী, মল্লিকা, শাপলা ফুলের সৌরভে শরৎ বাংলাকে অন্যরূপে সাজিয়ে দেয় । কবির কণ্ঠে ভেসে ওঠে-
“শিউলি ফুলের মালা দোলে
শরৎ রাতের বুকে অই ।”
হেমন্ত : শরতের পরিণত রূপ হেমন্ত ঋতু। একদিকে সোনালী রোদের ছড়াছড়ি, অন্যদিকে হিমেল কুয়াশা। মাঠে মাঠে ধান পাকার গন্ধে কৃষকের চোখে রঙিন স্বপ্ন। কৃষকেরা ধান কেটে নবান্নের উৎসবে মেতে ওঠে। হেমন্ত মূলত বাঙালির সারা বছরের সোনালী দিন। সুখ আর আনন্দ প্রকৃতির স্নিগ্ধতার মাঝে অপরূপ মনে হয় ।
কবি সুফিয়া কামালের ভাষায়-
“এই তো হেমন্তের দিন, দিল নব ফসলের সম্ভার
অঙ্গনে অঙ্গনে ভরি এই রূপ আমার বাংলার।”
শীতের পালা : হেমন্তের প্রৌঢ়ত্বের পর আসে জরাগ্রস্ত শীতের নির্মম বার্ধক্য। শুষ্ক, কাঠিন্য ও রিক্ততার বিষাদময় প্রতিমূর্তি রূপে শীতের আবির্ভাব ঘটে । শীত নির্মম রুক্ষতার প্রতীক । কারণ এসময় সমস্ত গাছ- পালা শুষ্ক, বিবর্ণ শ্রীহীন রূপধারণ করে। উত্তরের হিমেল বাতাস কাঁটার মতো সমস্ত শরীরকে বিদ্ধ করে। লেপ মুড়ি দিয়েও শীতের কবল থেকে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তবে এসময় পিঠা, পায়েস, শিন্নি, খেঁজুরের রস, গুড় দিয়ে নির্মাণ ও খাওয়ার ধুম পরে যায়। তা ছাড়া শীত উপহার দেয় বিভিন্ন শাক-সবজি, যা অন্য ঋতুতে দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায়। গোলাপ রজনীগন্ধা আতশিফুল শীতের ফুল। কবির কণ্ঠে ভেসে ওঠে-
“হিম হিম শীত
শীত বুড়ি এলোরে,
গরিবের একি হায়
লেপ কাঁথা নাইরে ।”
ঋতুরাজ বসন্ত : বসন্তের আবির্ভাবকে সম্ভব করার জন্যই মৌন তাপস শীতের কঠোর তপস্যা। ফুলে ফুলে সেজে সব শেষে তাই রূপসী বাংলার বুকে নতুন জীবনের বারতা নিয়ে নেমে আসে স্বয়ং ঋতুরাজ বসন্ত । নবীন প্রাণ, নবীন উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে যৌবনের সঞ্জীবনী রসে পরিপুষ্ট হয়ে আসে বসন্ত। তার ছোঁয়ায় গাছে জেগে ওঠে কত কিশলয় । পাখির কল-কাকলিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে। শিমুল, কৃষ্ণচূড়া ফোটে। আম- কানন মুকলিত হয় । বসন্তের সমাগমে ভ্রমরকূল মধুলোভী আর যত প্রাণী আনন্দে গুঞ্জন করে বেড়ায় আমের মুকুলে । বসন্তের অপরিমেয় প্রাণপ্রাচুর্য ও রূপ-সৌন্দর্যে কবি তাই বসন্তের বন্দনা করে বলেন -
“রঙ লাগালে বনে বনে
ঢেউ জাগালে সমীরণে।”
শেষের দিকে অফুরন্ত প্রাণবন্যায় সে মেতে ওঠে। শেষ বসন্তে তার এ বর্ণ বিলাস, প্রাণ প্রাচুর্যের জোয়ারে আসে ভাটা । গ্রীষ্মের জন্য তপস্যার আসন বিছিয়ে রূপ-নায়ক বসন্ত নেয় বিদায়।
উপসংহার : রূপসী বাংলার এরকম বিচিত্র ঋতুচক্র নানা বর্ণ, গন্ধ গানের সমারোহে নিত্য আবর্তিত হচ্ছে। এক ঋতু শেষ হতে হতেই আরেক ঋতু আসে। বাংলাদেশের রূপবৈচিত্র্যে লাগে ঢেউ । কিন্তু শহরবাসী ও শহরমুখী বাঙালি আজ আর অন্তরে তার নিমন্ত্রণ অনুভব করে না। আজ আমরা প্রকৃতিকে বিসর্জন বা নির্বাসিত করে বরণ করে নিচ্ছি উগ্র নাগরিকতার মরুময় তপ্ত নিঃশ্বাস। কিন্তু উপেক্ষিত প্রকৃতি একদিন না একদিন এর চরম প্রতিশোধ নেবে।
Tag:ষড়ঋতুর দেশ, ষড়ঋতু রচনা, বাংলাদেশের ছয়টি ঋতু, প্রিয় ঋতু, আমার প্রিয় ঋতু, স্বদেশ ও প্রকৃতি রচনা
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা
শিক্ষার্থীরা আজকে আমরা জানলাম বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা সম্পর্কে । যদি আজকের এই বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ । Search-Asked BD
বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা ক্লাস 7 বাংলাদেশের ষড়ঋতু ষড়ঋতু ষড়ঋতু রচনা বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা pdf বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা ক্লাস ২ bangladesher shororitu rochona class 4 ছয় ঋতুর দেশ রচনা ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা class 6
বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা,bangladesher shororitu rochona class 8,ষড়ঋতু রচনা,ষড়ঋতুর বাংলাদেশ রচনা,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা class 8,ষড়ঋতু,বাংলাদেশের ষড়ঋতু,ষড়ঋতু,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা,বাংলাদেশের ছয় ঋতু রচনা,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা ক্লাস 7,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা ক্লাস 8,ষড়ঋতুর,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা class 10,ষড়ঋতুর দেশ,রচনা ষড়ঋতু,বাংলাদেশের ষড়ঋতু,ষর ঋতু রচনা,ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ,কদম ফুল কোন ঋতুতে হয়,,ষড়ঋতু রচনা,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা,ষড়ঋতু,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা ক্লাস 7,বাংলাদেশের ষড়ঋতু,রচনা বাংলাদেশের ষড়ঋতু,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা ক্লাস 8,ষড়ঋতুর বাংলাদেশ রচনা,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা class 8,ষড়ঋতু,রচনা ষড়ঋতু,bangladesher shororitu rochona class 8,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা class 10,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা pdf,bangladesher shororitu rochona class 4,বাংলাদেশের ছয় ঋতু রচনা,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা ক্লাস 4,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা,বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ,বাংলাদেশের ষড়ঋতু,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা ক্লাস ২,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা class 4,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা class 7,ষর ঋতু রচনা,ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা class 6,ষড় ঋতু রচনা,বাংলাদেশ ষড়ঋতুর রচনা,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা class 9,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা ছোট,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা ভূমিকা,ষড়ঋতু রচনা class 4,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা ক্লাস 5,বাংলাদেশের প্রকৃতি রচনা class 4,বাংলা ষড়ঋতু,shororitu rochona,শীতকাল রচনা class 7,bangladesher shororitu rochona class 7,বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা hsc,bangladesher shororitu,ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ রচনা,শীতকাল রচনা class 6,bangladesher shororitu rochona,,
Post a Comment