এই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা টি যেকোন ক্লাসের জন্য। যারা ক্লাস ৭ম শ্রেনীতে আছে তাদের জন্যও এই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা টি। আবার ক্লাস দশম শ্রেনীতে আছো তাদের জন্য এই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা । অর্থাৎ ক্লাস ৭ম শ্রেনী থেকে ১০ম দশম শ্রেনী পর্যন্ত সবার প্রযোজ্য এই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা । রচনাটি পড়ার আগে তোমরা রচনা লেখার নিয়ম ও সুচিপত্রটি দেখা নাও।

 বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

প্রবন্ধ রচনা - প্রবন্ধ রচনার কৌশল - প্রবন্ধের কাঠামো, প্রবন্ধ রচনার দক্ষতা আসবে যেভাবে

প্রত্যেক জাতির কাছে কিছু বিষয় থাকে খুবই মর্যাদাবান। বাঙালি জাতির কাছে মুক্তিযুদ্ধও তেমনি। হাজার বছরেরইতিহাস পরিক্রময়ায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জন এই ইতিহাসেসবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি বাঙালি জাতির আত্মত্যাগের অম্লান প্রতীক। দেশপ্রেমের এক জীবন্ত স্মারক। এ যুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে নেয় একটি স্বাধীন দেশ— বাংলাদেশ । 

১৯৭১-এর ২৫-এ মার্চ রাতে বাংলার ঘুমন্ত, নিরস্ত্র বাঙালি সৈন্য থেকে শুরু করে অগণিত নিরীহ, অসহায় মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ট্যাংক, কামানসহ অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে বাঙালি নিধনযজ্ঞে মেতে উঠেছিল তারা। বাংলার সবুজ শ্যামল মাটি সিক্ত হয়েছিল নিরস্ত্র বাঙালির লাল রক্তে। নদীর স্বচ্ছ জলধারায় মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল রক্তধারা। যত্রতত্র অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে ধ্বংসপুরীতে পরিণত করতে চেয়েছিল তারা এ জনপদকে। এ হিংস্রতা, এ বর্বরতা, এ অন্যায় আগ্রাসন মুখ বুঝে সহ্য করেনি বাংলার মানুষ। যার যা আছে তাই নিয়েই প্রতিরোধ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিনিয়ে এনেছিল কাঙ্ক্ষিত বিজয়। 

মুক্তিযুদ্ধ হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা নয়। ১৯৪৭-এর পর থেকে একের পর এক আন্দোলনের সিঁড়ি ডিঙিয়ে চূড়ান্ত ফসল হিসেবে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়। '৫২-র ভাষা আন্দোলন, '৫৪-র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, '৬২-র সামরিক আইন ও শিক্ষা কমিশন রিপোর্টবিরোধী আন্দোলন, '৬৬-র ছয় দফার আন্দোলন, '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানেরই চূড়ান্ত পরিণতি '৭১-এর মুক্তিসংগ্রাম। অমর একুশে ফেব্রুয়ারির পথ বেয়েই এসেছিল ১৬ই ডিসেম্বর। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ সাধারণ জনগণকে নিয়ে গঠিত হয়েছিল মুক্তিবাহিনি। পাকিস্তান সেনাবাহিনিতে যেসব বাঙালি সৈন্য ছিল তারা এবং আধা-সামরিক বাহিনির বাঙালি সদস্যরাও তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তিবাহিনির সাথে সংহতি প্রকাশ করে।

২৫-এ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা ব্যাপক গণহত্যা চালায়। রাস্তায় যাকেই দেখতে পায় তাকেই গুলি করে হত্যা করে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালায়। পুরোনো ঢাকার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাসহ বহু আবাসিক এলাকায় আগুন ধরিয়ে দেয়, অসংখ্য মানুষ হত্যা করে, লুটপাট চালায়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের একক প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানি সৈন্যরা ২৬-এ মার্চের প্রথম প্রহরে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার হবার পূর্বে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রে স্বাক্ষর করেন। এর পরপরই সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান। ১০ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন ও স্বাধীনতার সাংবিধানিক ঘোষণাপত্র গ্রহণের মাধ্যমে বিদ্রোহী বাঙালি ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার ইতিহাসের সবচেয়ে বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকার গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথ তলার আম্রকাননের নামকরণ হয় মুজিবনগর। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে কুষ্টিয়ার মেহেরপুরে আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণের মাধ্যমে গঠিত হয় অস্থায়ী মুজিবনগর সরকার। এমাসেই গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধ চালানোর সুবিধার্থে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম. এ. জি ওসমানীর তত্ত্বাবধানে সমগ্র দেশকে এগারোটি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। বাঙালিদের সংগ্রামের প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁর সরকারের সমর্থন জ্ঞাপন করেন এবং অত্যাচারিত বাঙালিদের নিরাপদ আশ্রয় দেবার জন্য বাংলাদেশ-ভারতসীমান্ত উন্মুক্ত করে দেন। ১৯৭১ সালের ২৫-এ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের পর দেশের সকল স্তরের জনগণ প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ায়। বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক, ইপিআর, পুলিশ, আনসার, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ভূমিকাও ছিল গৌরবোজ্জ্বল। তারামন বিবি ও সেতারা বেগম বীর প্রতীক খেতাব লাভ করেন। এছাড়াও সংবাদপত্র, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও প্রবাসী বাঙালিরাও নানাভাবেসাহায্য-সহযোগিতা করেন। শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মীদের অবদান ছিল প্রশংসনীয়। জীবনের মায়া ত্যাগ করে সকলে নিজ নিজ অবস্থান থেকে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়েছে লাখো শহিদের রক্ত, অগণিত মানুষের চোখের জল আর কোটি মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে। এ যুদ্ধে এক কোটি নিরপরাধ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছে, ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহিদ হয়েছে, দুই লক্ষ বাঙালি নারী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছে। বাংলাদেশের এক শ্রেণির লোক পাকিস্তানিদের এ নৃশংসতাকে সমর্থন ও মদদ দিয়েছে। এ শ্রেণির সহায়তায় নৃশংসতম ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে বাঙালি শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিল্পী ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ। এভাবেই বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত ও নীল নকশা অনুযায়ী সংঘটিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৫-এ মার্চ রাত্রি থেকে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের আগ পর্যন্ত বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ চলে। ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ভয়াবহ রূপ নেয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাসের প্রতিটি ক্ষণ ছিল চরম আতঙ্ক আর অপরিসীম আশায় উদ্বেলিত। বাঙালি জাতি উদ্বুদ্ধ হয়েছিল প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস আর গভীর দেশপ্রেমের চেতনায়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের, মিথ্যার বিরুদ্ধে শাশ্বত সত্যের এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধ হয়ে দাঁড়ায় বাঙালির শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী চেতনার বহিঃপ্রকাশ। বিশ্ব ইতিহাসে বাংলাদেশের অভ্যুদয় তাই এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় ।  

আর্টিকেলের শেষকথাঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

শিক্ষার্থীরা  আজকে আমরা জানলাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা সম্পর্কে  । যদি আজকের এই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ । Search-Asked BD

Post a Comment

Previous Post Next Post