এই শীতকাল রচনা টি যেকোন ক্লাসের জন্য। যারা ক্লাস ৭ম শ্রেনীতে আছে তাদের জন্যও এই শীতকাল রচনা টি। আবার ক্লাস দশম শ্রেনীতে আছো তাদের জন্য এই শীতকাল রচনা । অর্থাৎ ক্লাস ৭ম শ্রেনী থেকে ১০ম দশম শ্রেনী পর্যন্ত সবার প্রযোজ্য এই শীতকাল রচনা । রচনাটি পড়ার আগে তোমরা রচনা লেখার নিয়ম ও সুচিপত্রটি দেখা নাও।
✅প্রবন্ধ রচনা - প্রবন্ধ রচনার কৌশল - প্রবন্ধের কাঠামো, প্রবন্ধ রচনার দক্ষতা আসবে যেভাবে✅
For class - 6
শীতকাল
ভূমিকা : প্রকৃতির পালাবদলের হাওয়ায় শীত আসে রিক্ততা আর শূন্যতা নিয়ে। ফসলহীন মাঠ, পাতাশূন্য গাছ- প্রকৃতি যেন বৈরাগ্যের বসন পরে। শীতকাল ছয়টি ঋতুর মধ্যে পঞ্চম। পৌষ ও মাঘ মাস শীতকাল। হেমন্ত ঋতুর রই শীতের প্রচণ্ড আবহ নিয়ে শীত ঋতুর আবির্ভাব ঘটে।
শীতের প্রকৃতি : শীত প্রকৃতির বুকে বুলিয়ে দেয় হিমেল হাওয়া। ভোরের ঘন কুয়াশার আবরণের অন্তরালে ঢাকা পড়ে প্রকৃতি সমস্ত রূপসজ্জার অলংকার ছুড়ে ফেলে সে যেন রিক্ত বৈরাগীর রূপ নেয়। গাছপালা হারায় সজীবতা। শুরু হয় পাতা করার পালা। শীতকালে পশুপাখি ও গাছপালার মধ্যে নির্জীবতা দেখা দেয়। এসময় রোদের তেজ কমে যায়।লোকেরা গরম ও পরিধান করে শীতের কষ্ট থেকে রক্ষা পেতে লোকজন শীতের কাপড় পরিধান করে। কিন্তু গরিব লোকেরা প্রচণ্ড শীতে কষ্ট পায়।
শীতের উপহার : শীতের শীতল আমেজ সবার মাঝে নব বার্তা পাঠায়। কুয়াশা আর শিশিরে ভেজা শীত সবুজ মনের কোণে শিহরণ জাগায়। রবি শস্যের সম্ভারে প্রকৃতির রিক্ততা কিছুটা হলেও ঘুচে যায়। কৃষাণি ব্যস্ত থাকে শীত মৌসুমের ফসল তোলার কাজে। শাকসবজির প্রাচুর্যে সকলের মুখে হাসি ফুটে। লালশাক, পালংশাক, বেগুন, বটি, শিম, টমেটো, আলু ইত্যাদি শাকসবজির সমারোহ লক্ষ করা যায় এ ঋতুতে। মূলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, ওলকপি ইত্যাদি শীতের আকর্ষণীয় ও উপাদেয় সবজি। শীতের উপহার হিসেবে বাজারে আসে জলপাই, কামরাঙা, কমলালেবু ও সফেদার ন্যায় নানা সুস্বাদু ফল। এসময় গাঁদা, গোলাপ, ডালিয়া, সূর্যমুখী, শিউলি ইত্যাদি রং-বেরঙের ফুলে বাগান ভরে যায়। এসময় খেজুরের রস পাওয়া যায়। এ রস দিয়ে ক্ষীর, পিঠা-পায়েস ও পুলি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। ছোটো ছেলেমেয়েরা এ ঋতুতে বেশ আনন্দ পেয়ে থাকে। ভোর হওয়ার আগেই তারা ফুল কুড়াতে বেরিয়ে পড়ে।
শীতের অসুবিধা : শীতের এতসব উপহারের মাঝেও কিছু বিষণ্নতার করুণ চিত্র ফুঠে ওঠে। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত মানুষদের জন্যে শীত সবচেয়ে কষ্টদায়ক ঋতু। হাড় কাঁপানো শীতে তাদের দুঃখের সীমা থাকে না। তখন শুধু অপেক্ষার পালা, কখন আকাশে নতুন সূর্যের আগমন ঘটবে। অনেক সময় দুই-তিন দিন পর্যন্ত সূর্যেরও মুখ দেখা যায় না। খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে তখন একটুখানি উষ্ণতার সন্ধান করে তারা। শীতল বাতাস কুঁকড়ে যাওয়া মানুষের জন্যে মৃত্যুর কারণ হয়েও দাঁড়ায়। শীতকালে দেহ মনে এসে ভর করে রাজ্যের আলস্য। বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চায় না। কাজে বের হতে প্রায়ই দেরি হয়ে যায় ।
শীতের উৎসব : শীতকালে তীব্র গরম বা ঝড়বৃষ্টি কোনোটাই থাকে না। বিনোদন ও ভ্রমণের জন্যে মানুষ তাই শীতকালকে বেছে নেয়। এ সময় নবান্ন উৎসব, পৌষমেলা ছাড়াও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মুখরিত হয় দেশ।বিশেষ করে বিয়ের ধুমধামে চারদিক যেন উৎসবমুখর হয়ে ওঠে।
উপসংহার : শীতকাল সবার জন্যে নির্মল আনন্দ ও সুখ বয়ে নিয়ে আসে না। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকার কারণে দরিদ্র মানুষেরা শীতকালে অতিকষ্টে জীবন কাটায়। শীতকাল কিছুটা কষ্টের হলেও অনেকেই এ ঋতু পছন্দ করে।কারণ শীত প্রাচুর্যের ঋতু, গ্রামবাংলার সচ্ছলতার ঋতু।
For class - 7,8
শীতের সকাল
ভূমিকা :জ্বরাগ্রস্ত জীবনের বার্তা নিয়ে শীত এসে বাংলা প্রকৃতির বক্ষ দখল করে। উত্তরের হিমেল বাতাস দেহমনে শীতল তীরের আঘাত হানে। বনের গাছপালার পাতা ঝরে। কবির ভাষায় -
“শীতের হাওয়ায় লাগল নাচন
আমলকীর এই ডালে ডালে।
পাতাগুলি শিরশিরিয়ে
ঝরিয়ে দিল তালে তালে।”
শীতের সকালের প্রকৃতি :শীত আসে শূন্যতা আর জড়তা নিয়ে। হেমন্তের ফসল তখন ঘরে ওঠেছে। শীত আসে শূন্য মাঠের পথ ধরে। শীত যখন চলে যায় তখন শুরু হয় বসন্তের গৌরবময় অভিযান। শীতের শুরু থেকেই প্রতি সকালেই বইতে থাকে উত্তরের বাতাস। কুয়াশার ঘোমটা টেনে সকাল হয়। দিনের আয়ু কমে। সকালের সোনা রোদ পড়ে শিশির ভেজা সবজি খেতে। আকাশটা চকচকে নীল হয়। সকালের নীল রোদে মিলিয়ে মনে হয় এক তরল উজ্জ্বল সরোবর যেন। মনে হয় এক চুমুকে রোদের নীলটুকু পান করি। গাছের পাতা খসে পড়া শীতের সকালের কনকনে ঠাণ্ডার উপদ্রব। কবির উচ্চারণ-
“হিম হিম শীত শীত
শীত বুড়ী এলোরে,
কনকনে ঠাণ্ডায়
দম বুঝি গেলরে।”
পৌষ-মাঘ, শীতের এ দুই মাসের প্রতিটি সকালে এ-কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।
প্রকৃতি ও জীবজগতের পরিবর্তন :শীতের সকালে প্রকৃতি, মানুষ ও জীব-জন্তুর মধ্যে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। কার্তিকের শুরুতেই দিন খুব ছোট আর রাত্রি খুব বড় হয়। নর-নারী শীতের রাত্রে ঝিমুতে ঝিমুতে প্রতীক্ষা করে কখন পূর্ব আকাশ হতে আল্পনা দেয়া রক্তের মতো লাল সূর্য। রাত্রি শেষ হবার পরে যখন পূর্বাকাশে সূর্য ওঠে তখন সকালের কুয়াশা ছিন্নভিন্ন হতে থাকে। চাঙ্গা হয়ে ওঠে প্রকৃতি ও জগত। কর্মচঞ্চল জীবনে শুরু হয়ে যায়। ছোটাছুটি । কৃষক শীতের সকালে মাঠে গিয়ে ধান কেটে, ধান নিয়ে গৃহপানে ফেরে আর কৃষাণী ধান ভানার মহোৎসবেরমাঝে পড়ে যায়। গান জাগে মানুষের মনে-
‘পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয়রে চলে আয়
আয় আয় আয়।
ডালা যে তার ভরেছে আজ পাকা ফসলে
মরি হায় হায় হায়?
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
শীতের সকালের বর্ণনা :কুয়াশার স্বপ্ন চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকে শীতের পৃথিবী। পুর্বাকাশে লাল সূর্যটা উঁকি মারে। মারলে কী হবে? মানুষ তখন লেপের নিচে। গ্রামের মানুষ কাক-ডাকা ভোরে মাঠে গিয়ে আগুন জ্বালায়।শহরের মানুষগুলো ঘরের জানালা আটটার আগে খোলেনই না। শীতের প্রচণ্ডতায় পাখ-পাখালিও দেরীতে নীড় ত্যাগ করে । অরুণ রাঙা শীতের সকালে রুপালী শিশির মুক্তোর মতো চিক্চিক্ করে ওঠে। শীতের সকাল বিবর্ণ, মৃত্যুজীর্ণ নয়। সকাল বেলাতেই বাগান আলো করে দাঁড়িয়ে থাকে, গাঁদা, কলাবতি, নীলমণি, পলাশ ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা আর জিনিয়া। ওরা যেন শীতের সকালে স্বাগত জানায়। শীতের সকালে গ্রামের খেজুর রসের মধুর হাঁড়ি উজাড় করে দিতে ছুটে আসে রসওয়ালা। পাটালি গুড়ের সাথে চলে পিঠে পায়েশের ধূম। পৌষ পার্বণের দিনে নানা রকমের মনোমুগ্ধকর পিঠার উৎসবে মুখরিত হয় গ্রাম বাংলার শীতের সকাল। শীতের সকালে গ্রামদেশে বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে পিঠা বানানোর পাল্লা পড়ে যায়। ভারে ভারে শিম, বরবটি, কপি, কলা, ফুলকপি, বেগুন গ্রামের মানুষেরা নিয়ে চলে হাটবাজারের দিকে। শীতের সকালে শহরে বন্দরে দেখি কাজের তৎপরতা। কর্মচঞ্চল জীবনের পরিচয় যেন শীত সকালের মতো অন্য কোনো ঋতুতে খুঁজে পাওয়া যায় না। সুলভ খাদ্যদ্রব্য গ্রামাঞ্চলে উৎপাদিত ফসলের আনাগোনা; তাই শীতের পরশ করে রোমাঞ্চিত।
মানব মনের উপর প্রভাব ঃ শীতের সকালটাই যেন কর্মজীবী মানুষের সঞ্জীবনী সুধা। প্রচণ্ড শীতের সকালই মানুষের সারাদিনের কর্মপ্রেরণার উৎস। সারা রাতের আড়ষ্ট মনটাকে শীতের সকাল পুন সজীব করে তোলে।
শীতে মিলনের বাঁশী বাজে : শীতে প্রকৃতির সজীবতার ওপর শান্তি নেমে আসলেও জীবনদায়ীনী রোদের মাদকতায় ঝরা পাতার প্রকৃতিকে মনে হয় কত সজীব। উৎসবের সমারোহে, খাদ্যের নানা সুমিষ্ট ও উপাদেয় উপাচার শীত সকালে মিলনের বাঁশী বাজিয়ে ফিরে। কে যেন পাকা ধানের মাঠে মাঠে স্বর্ণের অপরূপ মায়া বিছিয়ে দেয় শীত সকালে। শিশির বিন্দু সূর্যকিরণে ঝলমল করে লক্ষ মাণিক হয়ে হাসে।
উপসংহার : এক একটি সকাল আমাদের জীবনে আসে মহৎ চলমান জীবনের বার্তা নিয়ে। মানবের কর্মচঞ্চলতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কুয়াশাছন্ন ঝিমিয়ে পড়া প্রকৃতি সজাগ হয়ে ওঠে শীতের প্রাক্কালে।
For class - 9,10
একটি শীতের সকাল
ভূমিকা :
“এসেছে শীত গাহিতে গীত বসন্তেরি জয়”
যুগের পরে যুগান্তরে বরণ করে নয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বসন্তের আগমনের পূর্বে কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে শীতের আগমন ঘটে। শীতকালের যেকোনো একটি সকাল মানব মনে বিচিত্র অনুভূতির সঞ্চার করতে পারে। পাতা-ঝরা, কুয়াশা মোড়া সকালের দিকে তাকালে মন কেমন বিষণ্ন হয়ে ওঠে। তখন শীতকে একতারা হাতে, বৈরাগীর ন্যায় উদাসী এক বাউল মনে হয়। শুধু বৈরাগীই মনে হয় না। শীত এসে মানুষকে আরও প্রাণ চঞ্চল ও আনন্দমুখর করে তোলে। নানা মেলা, নানা পার্বণ নিয়ে শীত মানুষের নিরানন্দের ঢাকনাকে সরিয়ে দিয়ে খুশির ছোঁয়া লাগিয়ে দেয়।
শীত কী?
শীত কর্মী ঋতু বিধায় সাৰ্থকর্মই তার প্রকৃত পরিচয়। পৌষ ও মাঘ মিলে শীতকাল। হেমন্তের সেনা ঝরা মাঠে শীতের আগমেন রিক্ততায় ভরে ওঠে প্রকৃতি। শীতের আগমনে উত্তরে হিমেল হাওয়া হাড়ে কাঁপন জাগায়। গাছের সবুজ পাতাগুলো হলুদ বরণ হয়ে যায়। ঝরাপাতার রিক্তশাখা বৃক্ষ শীতে বিবর্ণ হয়ে প্রকৃতির সবুজ শ্যামলিমা রঙ ধুয়ে যায়।
শীতের সকালের আগমন :
“হিম হিম শীত শীত / শীত বুড়ি এলোরে,
কনকনে ঠাণ্ডায় / দম বুঝি গেলোরে।”
শীতের রাতে মানুষ লেখাপড়া মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকে। লেপের নিচ থেকে উঠতে ইচ্ছে করে না, চোখে থাকে ঘুমের আবেশ, কত বেলা হয়েছে তাও বোঝা যায় না। এক সময় পাখির কিচিরমিচির ডাক বুঝিয়ে দেয় সকালের বার্তা। কুয়াশার বুক ভেদ করে ফুটে ওঠে আলোর রেখা, প্রভাতের বার্তা বহন করে নিয়ে আসে। মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনি। তীব্র শীতের ভয় উপেক্ষা করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ছুটে চলেন মসজিদে। গৃহত্যাগী গবাদি পশুর ডাক আর রাখালের পদচারণা এবং কৃষকের গরু নিয়ে মাঠে যাওয়া শুরু হয়ে যায়। কারো কারো গায়ে সামান্য শীত বস্ত্র থাকে, আবার কারো তাও থাকে না।
শীতের সকালের দৃশ্য : শীতের সকাল কুয়াশায় ঢাকা থাকে। দিগন্ত বিস্তৃত সাদা শাড়ি দিয়ে যেন প্রকৃতিকে ঢেকে রাখে কুয়াশার আড়ালে। হঠাৎ করে পূর্ব আকাশে ধীরে ধীরে সূর্যের আলো ঝলমল করে ওঠে। উত্তর দিক থেকে শীতল বাতাস দীর্ঘশ্বাসের মতো শিরশির করে বনের গাছ-পাতাগুলোর ফাঁক দিয়ে বয়ে যায়। পাতাগুলো কেঁপে ওঠে, টিপটিপ করে শিশির ঝরে, বনের ও মেঠোপথ শিশিরে সিক্ত হয়ে যায়। শিশিরের ওপর সূর্যের আলো পড়লে মুক্তার মতো ঝলমল করে ওঠে। সূর্য দক্ষিণ দিকে হেলে এগোতে থাকলেও ঘন কুয়াশার কারণে দূরের সব কিছু ঢেকে যায়। কিছুই দেখা যায় না। টিনের চাল, গাছের ডাল বা পত্রপল্লব থেকে টুপটাপ করে ঝরতে থাকে নিশির শিশির। পাখিদের কোলাহলে ব্যস্ত না থাকলেও হলুদ সর্ষে ক্ষেতে যখন ফুল ফোটে তখন অলির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে ওঠে সকাল। খেজুর গাছে গাছে ঝুলতে থাকা রসের হাঁড়ি থেকে বাতাসে লোভনীয় মিষ্টি গন্ধ ভেসে ওঠে। গাছের পাতা বিবর্ণ হয়ে বুড়িয়ে গিয়ে ঝরতে থাকে এবং বাতাস শুষ্ক হয়ে যায়। এদিকে গ্রাম্য কৃষকেরা সকাল হতেই সকালের কুয়াশাকে দু'পায়ে মাড়িয়ে বলদ-জোয়াল নিয়ে মাঠের দিকে ছুটে চলে। মুগ, মসুর, ছোলা অড়হর ইত্যাদি রবি শস্যের সবুজ চারাগাছের ওপর পড়ে থাকা কুয়াশার বিন্দু যেন সবুজের ওপর মুক্তার বিন্দু বলে মনে হয়। শীতের সকালে চাষীরা যখন মাঠে যায় কড়কড়ে ঠাণ্ডা ভাত খেয়ে তখন হলুদসর্ষের ফুল বা নুইয়ে পড়া মটরশুটি জড়িয়ে ধরে পা। কবির ভাষায়-
“সরষে বালা নুইয়ে গলা হলদে হাওয়ায় সুখে,
মটর বোনের ঘোমটা খুলে চুমু দিয়ে যায় মুখে।
ঝাউয়ের ঝাড়ে বাজায় বাঁশি পউষ পাগল বুড়ি।”
শীতের সকালে শীত নিবারণের জন্য বস্ত্রহীন ছোট বড় মানুষের সূর্যের মুখ দেখার জন্য জানালা দিয়ে উঁকি মারে কিংবা কোথাওবা আগুন জ্বেলে আগুন পোহাতে থাকে।
রূপবদল : সকালের কুয়াশার ঘোর কাটে বেলা বাড়ার সাথে। এদিকে শীতের সূর্য পূর্বাকাশের কুয়াশার জ্বাল ছিদ্র করে পরম ঔদাস্যে ওপরে ওঠে তার রশ্মিবানে পর্যুদস্ত করে শীতের তীব্রতা। রৌদ্রের পাত্রে শীতের সকাল যেন একবিন্দু শিশিরের মত টলমল করে কাঁপতে থাকে। দূর থেকে রাখালের বাঁশির শব্দ ভেসে আসে, লেজ দুলিয়ে গরুগুলো মনের আনন্দে মাঠে ঘাস খায়। রোদের তাপ বাড়ার সাথে উত্তরে বাতাসের তীব্রতা কমতে থাকে।
শীতের সকালে গ্রামের অবস্থা : সত্যিকার অর্থে শীতের সকালের তাৎপর্য গ্রামেই বোঝা যায়। গ্রামের প্রকৃতিতে শীতের সকাল বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে শীতের গ্রামবাংলা- যেখানে মাঠে মাঠে ধান কাটা হয়ে গেছে, কিষাণ ছুটছে মাঠের পানে। আর বধূরা চলেছে ঘাটের পানে। ছোট ছেলেমেয়েদের রৌদ্রের পরশে হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যেই শীতের সকালের রূপ বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। আরও ফুটে ওঠে কোনো দরিদ্র ঘরের ছোট শিশুটি বস্ত্রাভাবে শীতে টক টক করে কাঁপতে থাকার মধ্যে। বেদনার এ চিত্র ফুটে ওঠে সুকান্তের মর্মস্পর্শী কবিতায়-
“হে সূর্য তুমি তো জানো/আমাদের গরম কাপড়ের অভাব।
সারা রাত খড় কুটো জ্বালিয়ে / এক টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে
কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই।”
গ্রামের মানুষের শীতের সকাল কাটে মূলত খড়কুটো দিয়ে জ্বালানো আগুনের কুণ্ডকে কেন্দ্র করে। প্রত্যেক বাড়ির আঙ্গিনাতেই আগুনকে ঘিরে গোলাকার বৃত্তের ন্যায় গ্রামের মানুষ শীত নিবারনের সাথে বিভিন্ন রসালো এবং বেদনাদায়ক গল্পে মেতে ওঠে। সূর্যের আলো দেখা দিলে শিশু ও বৃদ্ধদের চোখ আনন্দে ঝলমল করে। ওঠে। রৌদ্রময় স্থানের দিকে ছুটতে থাকে তারা। তবে এত শীতের কাঁপুনিতেও খেঁজুরের রস খাওয়ার আনন্দ থেকে থেমে থাকে না তারা। বরং অধীর আগ্রহে গাছির গাছ থেকে রস নামানোর অপেক্ষায় বসে থাকে এবং শীতার্ত ঠাণ্ডায় ঠাণ্ডা খেঁজুরের রস খেতে থাকে আর কাঁপতে থাকে । এ এক অপরূপ শিহরণ জাগানো দৃশ্য।
শীতের সকালে শহরের অবস্থা : শীতকালের সকালে শহরের দৃশ্য ভিন্নধর্মী। শহরে শীতের প্রকোপ কম থাকে। কারণ ইটের পর ইট প্রকৃতিকে উপভোগ করতে দেয়ই না। আবার বড় বড় অট্টালিকা ভেদ করে শীতের বাতাস প্রবাহিত হতে পারে না। উত্তরের শীতল বাতাস বয়ে আসলেও খেজুরের রস কিংবা নলেন গুড়ের মন মাতানো গন্ধ আমোদিত করতে পারে না। শহরের শীতের সকালে নোংরা গন্ধ, কাকের ডাক, কলের শব্দ, ডিজেল-পেট্রোলের গন্ধ এবং বাস ট্রাকের শব্দে মিশে যায় শত কোলাহল। সকাল হলে অফিসগামী মানুষের ছুটাছুটি । যান্ত্রিক সভ্যতায় অভ্যস্ত শহরবাসীরা। তাই প্রকৃতির রূপ আর সুষমা ইটের কাঠিন্যের মধ্যে বসে উপভোগ করার সময় তাদের নেই।তবে ভিন্ন রূপও আছে। শহরের সকাল আসে খুশির মেজাজ নিয়ে নানা সাজে, নানা রঙে সাজাতে। শীত মৌসুমে শহরে খেলাধূলার আসর বসে। মানুষকে ঘর থেকে বাইরে বের করে নিয়ে আসে। সার্কাসের তাঁর পড়ে শহর থেকে একটু দূরে। বনভোজনের হাতছানিতে ছুটে চলে শহর থেকে শহরে। ছুটির দিনে চিড়িয়াখানাসহ অন্যান্য জায়গায় চলে ঘোরাঘুরি। ফলে অন্য আমেজে শহরবাসী উজ্জীবিত হয়ে ওঠে শীতের আগমনে।
শীতের সকালে খাবার দাবার :
“পৌষ মাসে পিঠা খেতে বসে খুশিতে বিষম খেয়ে
আরও উল্লাস বেড়েছে মনে মায়ের বকুনি খেয়ে।”
গ্রামে শীতের সকালে নানা রকম খাবার তৈরি হয়। গাঁয়ের ঘরে ঘরে তৈরি হয় পিঠা এবং পিঠা তৈরির মাধ্যমে গ্রামের মহিলাদের শৈল্পিক কুশলতার পরিচয়ও পাওয়া যায়। শীতের সকালে খেঁজুরের পাটালি দিয়ে তৈরি করা গরম ভাপা পিঠা নরম রোদে বসে খাওয়ার আনন্দ গ্রাম্য জনগোষ্ঠীর অজানা নয়। এখন শুধু গ্রামেই না, শহরের রাস্তায়ও সকালে ভাপা পিঠা বানিয়ে বিক্রি করা হয়। এছাড়া খেঁজুরের রসে ভেজানো চিতই পিঠা, তেলের পিঠা, পাটিসাপটা, ভাপাপুলিসহ আরো নানারকম পিঠার সাথে খেঁজুরের রসের পায়েসও বাঙালি জনগোষ্ঠীকে রসময় করে তোলে। শুধু পিঠা নয় পিঠার সাথে শীতের টাটকা শাক-সবজির চাষ হয়, চাষ হয় নানা জাতের কপি, টমেটো, গাজর, বরবটি, পালংশাক, মূলা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন। অর্থাৎ বৎসরের অন্যান্য ঋতুর তুলনায় শীতের সবজি বাঙালির খাবারে অতিরিক্ত রসনার সৃষ্টি করে। বড়ই, কমলালেবু শীতেরই ফল। শীতের সকালে কুয়াশা ভেজা বড়ই গাছের তলা থেকে ঝড়ে পড়া পাকা বড়ই কুড়িয়ে খাওয়া, কমলালেবু শীতেরই ফল। শীতের সকালে কুয়াশা ভেজা বড়ই গাছের তলা থেকে ঝড়ে পড়া পাকা বড়ই কুড়িয়ে খাওয়া গ্রামের বাচ্চাদের জন্য বাড়তি আনন্দ । কৈ, মাগুর, শিংসহ অন্যান্য মাছ এ সময় প্রচুর পাওয়া যায়। শীতের সকালটাকে আরও মধুময় করে তোলে গাঁদা ও সূর্যমুখী ফুল ফোঁটার মাধ্যমে।
শীত সকালে দুর্ভোগ : শীতের সকালে বিভিন্ন ধরনের আনন্দ উপভোগ করা গেলেও অনুন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষই দরিদ্র। ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শীতবস্ত্রের অভাব রয়েছে ব্যাপক। শীতকালে সকালের শীত সহ্য করতে না পেরে প্রতি বছরই বহু শিশু ও বৃদ্ধের মৃত্যু সংবাদ শোনা যায়। ফলে প্রত্যেক ভালোর পেছনে মন্দটাও ওঁৎ পেতে দাঁড়িয়ে থাকে কালরূপী ভয়ংকর থাবা নিয়ে। এজন্য শীতের সকালের দুর্ভোগকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই।
উপসংহার : ঋতু তরঙ্গশালায় । শীতের আবির্ভাব বাংলার প্রকৃতিতে নিয়ে আসে এক ভিন্ন স্বাদ। শীতের সকালে পথঘাট কুয়াশায় আচ্ছন্ন করে রাখে এবং সেই কুয়াশার জাল ভেদ করে সূর্যের রশ্মি একটু একটু করে যখন প্রকাশ পায় তখন মনে হয় যেন স্বর্গপুরী থেকে নেমে আসছে 'অরুণ-বরুণ-কিরণ মালা'। গাছের পাতাগুলো ঝরে পড়ে। মাঠের পাকা ফসলের জন্য তখন সকলের নিমন্ত্রণ। এ সময় সকালে শীত নিবারণের জন্য জ্বালানো আগুনে পাকা ছোলা গাছসহ পুড়িয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা। একদিকে মাঠে ফসলের পূর্ণতা, অন্যদিকে শস্যহীন মাঠ ও পত্র পুষ্পহীন স্নান তরুরাজির মহাশূন্যতা। শীতের সকালের প্রকৃতির এই রূপের অন্তরালে মনে জাগে অফুরন্ত প্রেরণা, প্রাণকে জাগিয়ে দিয়ে যায় নতুন স্বপ্নের মাদকতা। শীত তার রিক্ততার মধ্য দিয়ে সন্ন্যাসীর ন্যায় নিজেকে শূন্য করে অপরূপ সাজে সজ্জিত হওয়ার ইঙ্গিত বসন্তকে দিয়ে বিদায় নেয় এ ধরা থেকে। আমাদের মনে অনন্ত আশার আলো জাগিয়ে দিয়ে যায় বসন্তের আগমনী বার্তায়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ শীতকাল
শিক্ষার্থীরা আজকে আমরা জানলাম শীতকাল রচনা । যদি আজকের এই শীতকাল রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ । Search-Asked BD
winter season,শীতকাল রচনা,শীতকাল অনুচ্ছেদ,শীতকাল রচনা চতুর্থ শ্রেণী,শীতের সকাল রচনা,শীতকাল,শীতকাল রচনা class 2,শীতকাল অনুচ্ছেদ রচনা,শীতকাল রচনা class 6,শীতকাল রচনা class 5,shitkal rachana,শীতকাল অনুচ্ছেদ ২য় শ্রেণী,শীতকাল রচনা পঞ্চম শ্রেণী,অনুচ্ছেদ শীতকাল,শীতের সকাল রচনা ৭ম শ্রেণী,শীতকাল অনুচ্ছেদ for class 7,শীতের উৎসব রচনা class 5,শীতের সকাল রচনা ২০ পয়েন্ট,শীতকাল রচনা for class 3,শীতের উৎসব রচনা,winter make sentence,রচনা শীতের সকাল,শীতকাল রচনা pdf,শীতকাল সম্পর্কে ১০ টি বাক্য,শীতের প্রকৃতি রচনা,shitkal rachna,essay on winter vacation,শীতের সকাল সম্পর্কে ১০ টি বাক্য,শীতের সকাল রচনা ছোট,শীতকাল ছোট রচনা,shitkal rachana class 6,winter season paragraph for class 7,শীতকাল রচনা class 3,শীতের সকাল রচনা ২য় শ্রেণী,winter season 10 lines,winter season essay for class 6,অনুচ্ছেদ রচনা শীতকাল,শীতকাল অনুচ্ছেদ for class 3,winter paragraph class 5,winter season paragraph for class 6,শীতকাল রচনা তৃতীয় শ্রেণী,make sentence winter,শীতকাল রচনা for class 1,শীতকাল রচনা for class 2,শীতকালের রচনা,শীতের সকাল রচনা class 4,winter season paragraph in bangladesh,পার্বণ দিয়ে বাক্য রচনা,ফসলের ডাক ৭ম শ্রেণী,শীতের উৎসব রচনা class 4,শীতের উৎসব অনুচ্ছেদ,শীতকাল রচনা class 1,একটি শীতের সকাল রচনা class 6,শীতকাল রচনা class 7,winter paragraph,শীতের মেলা রচনা,শীতকাল রচনা প্রথম শ্রেণী,শীত ঋতুর উৎসব,বাংলাদেশের শীতকাল রচনা,winter paragraph for class 3,শীতকালের অনুচ্ছেদ,shitkal rochona,10 lines about winter season,একটি শীতের সকাল রচনা,শীতকাল প্রবন্ধ রচনা,winter season essay for class 1,describe a winter morning,শীতকাল সম্পর্কে ১৫ টি বাক্য,,
Post a Comment