ভূমিকা : সময়ের সাথে জীবন, জীবনের সাথে কর্ম ও অধ্যবসায়- একই বিনিসুতার মালায় গাঁথা। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি সচল থাকতে পারে না। এ পৃথিবীতে যেকোনো কাজ করতে গেলেই সফলতা ও নিষ্ফলতা উভয় প্রকার ঘটনাই ঘটে থাকে। আর সফলতার চাবিকাঠিই হল অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া মানবজীবনে উন্নতির আশা করা যায় না। তাই বলা যায়-
অধ্যাবসায়
ভূমিকা : সময়ের সাথে জীবন, জীবনের সাথে কর্ম ও অধ্যবসায়- একই বিনিসুতার মালায় গাঁথা। একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি সচল থাকতে পারে না। এ পৃথিবীতে যেকোনো কাজ করতে গেলেই সফলতা ও নিষ্ফলতা উভয় প্রকার ঘটনাই ঘটে থাকে। আর সফলতার চাবিকাঠিই হল অধ্যবসায়। অধ্যবসায় ছাড়া মানবজীবনে উন্নতির আশা করা যায় না। তাই বলা যায়-
অলস হয়ো না।
দুঃখ করো না
তোমারই হবে আলো
রহিবে সবার ঊর্ধ্বে
হও যদি মোমেনিন ।
আত্মশক্তি, মনোবল, একনিষ্ঠ সাধনা, অবিচল ধৈর্যের পরিশ্রম অধ্যবসায়ের অঙ্গ।
অধ্যবসায়ের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য : মানুষ জীবনকে সাজাতে চায়, সফল করতে চায়, কিন্তু জীবনের পথ খুব সহজ নয় । সহজেই জীবনে সব কাজে সফলতা আসে না বা সমাধা করা যায় না। দ্বিতীয়বারেও হয়তা সফল হওয়া যায় না । তবুও হতাশ না হয়ে ধৈর্যের সাথে কাজে লেগে থাকতে হয়। বারবার চেষ্টা করলে একবার না একবার সফলতা আসবেই। আর সাফল্য লাভের তীব্র প্রয়াসই অধ্যবসায়। এই ধারণাকে কৰি প্রবাদতুল্য করে তুলেছেন এভাবে-
পারিব না, একথাটি বলিও না আর,
পারো কি না পারো করো যতন আবার,
একবার না পারিলে দেখ শতবার ।
কোনো কাজে সফলতা অর্জনের জন্য ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা করার নামই অধ্যবসায়। অধ্যবসায় মূলত কতিপয় গুণের সমষ্টি। এ গুণগুলিইে অধ্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য বলা হয়। যেমন- চেষ্টা, উদ্যোগ, আন্তরিকতা, পরিশ্রম, ধৈর্য ইত্যাদি। এ সকল গুণের সমন্বয়ে অধ্যবসায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। মনের আস্থা ও বিশ্বাসকে বাস্তব রূপদানের জন্য দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্যের মধ্যদিয়ে ইন্সিত লক্ষ্যে পৌছানোর মধ্যেই অধ্যবসায়ের সার্থকতা নিহিত।
অধ্যবসায়ের ধারণা : অনেকেই মনে করতে পারেন কেবল প্রতিভাবান ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ জীবনে লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন না। এ কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করে যেকোনো প্রতিভা কাজকে ত্বরান্বিত করতে পারে এবং পরিপূর্ণ সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে পারে একমাত্র অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। আর পৃথিবীতে সফলকামী যত ব্যক্তি আছেন তাঁরা সকলেই ছিলেন- অধ্যবসায়ী। অধ্যবসায় ব্যতীত জীবনের কোন সাধারণ কাজও অনেকসময় সম্পন্ন করা যায় না। বৃহৎ কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ অবিরাম চেষ্টা, সযত্নে এবং অক্লান্ত পরিশ্রম দ্বারা সফলতা লাভ করেন।
অধ্যবসায়ের গুরুত্ব : মানব সভ্যতার মূলে অধ্যবসায়ের এক বিরাট মহিমা। মানবজীবন প্রতিনিয়তই প্রতিকূল পরিবেশের সাথে লড়াই করছে। কিন্তু এত প্রতিকূলতাকে ভয় পেলে চলবে না বরং রাতের পরে যেমন আঁধার পেরিয়ে দিনের আলো নেমে আসে তেমনি অবিরাম চেষ্টার মাধ্যমেই প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে ভাগ্যাকাশে সাফল্যের শুকতারার দেখা পাওয়া যায়। রোগ-শোক, দরিদ্র, নৈরাশ্য, দৈব-দুর্ঘটনা ইত্যাদি অনেক সময় আমাদের চলার পথকে হয়ত সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত করে। কিন্তু অধ্যবসায়ের দ্বারা এসব সাময়িক বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়া সম্ভব। এ জন্য আমাদেরকে বহু প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাবার শক্তি অর্জন করতে হয়। আর এ শক্তির উৎসই হলো অধ্যবসায়। অধ্যবসায়ের গুণেই মানুষ বড় হয়। অসাধ্য সাধন করে। এককথায় নিরাশা বা ব্যর্থতাকে জয় করার একমাত্র উপায় অধ্যবসায় ।
অধ্যবসায়ের উদাহরণ : জগতে যত বড় শিল্পী-সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক, সেনানায়ক, ধর্মপ্রবর্তক রয়েছে, তাঁদের সবাই ছিলেন অধ্যবসায়ী। ইতিহাসের পাতা থেকে বহু উদাহরণ পাওয়া যায় যাঁরা অধ্যবসায়ের কারণে কঠিন দুর্গম পথ অতিক্রম করে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন। যেমন- মহাকবি ফেরদৌস ত্রিশ বছরের সাধনায় মহাকবি করেছেন। জ্ঞানেন্দ্র মোহন দাস বিশ বছরের প্রচেষ্টায় রচনা করেন পঞ্চাশ হাজারের বেশি শব্দ সংবলিত বাংলা ভাষার অভিধান । আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই নিজের চেষ্টা ও সাধনায় দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে সংগ্রহ করেছেন দু'হাজার প্রাচীন পুঁথি। যার ফলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রায় চারশ বছরের ইতিহাসের অজানা অধ্যায় উদ্ঘাটিত হয়েছে। মনীষী কার্লাইল অনেক বছরের শ্রমে ফরাসি বিপ্লবের অসামান্য ইতিহাস লিখেছেন। মহাজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন নিজেই স্বীকার করেছেন বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের মূলে আছে বহু বছরের একনিষ্ঠ নিরবচ্ছিন্ন শ্রম। আর নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন, অসম্ভব বলে কিছু নেই।
অধ্যবসায়ীর জীবনাদর্শ : জীবন সংগ্রামে সাফল্য রাডের মূলমন্ত্র হচ্ছে অধ্যবসায়। অর্ধ পৃথিবীর অধিশ্বর নেপোলিয়ন তাঁর কর্মজীবনের মধ্যদিয়ে রেখে গেছেন অধ্যবসায়ের অপূর্ব নিদর্শন। কোনো কাজকে অসম্ভব মনে করেননি বলে তিনি দরিদ্র পরিবার জন্ম নিয়েও ফরাসি জাতির ভাগ্যবিধাতা হতে পেরেছিলেন। শুধু অধ্যবসায়ের বলেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জগদীশচন্দ্র বসু, কাজী নজরুল ইসলাম প্রমুখ মনীষীগণ বিশ্বখ্যাত হয়েছেন।
ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব : বিধাতা প্রত্যেক মানুষকে যেমন প্রতিভা দিয়েছেন তেমনি প্রতিভা বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় বিবেক বুদ্ধি দিয়েছেন। মানবজীবনের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার জন্য চাই অধ্যবসায়। অনেকের ধারণা প্রতিভা ছাড়া কোনো বড় কাজে সফলতা আসে না। কিন্তু অসাধারণ প্রতিভা ছাড়াও অধ্যবসায়ের দ্বারা যেকোনো কাজে সফল হওয়া যায়। তবে অধ্যবসায়ের সাথে চাই পরিশ্রম। নিউটনের বক্তব্য স্মরণ করা যায়, “আমার আবিষ্কারের কারণ প্রতিভা নয়। বহু বছরের চিন্তাশীলতা ও পরিশ্রমের ফলে দুরূহ তত্ত্বগুলোর রহস্য আমি ধরতে পেরেছি।" ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার এর মন্তব্য- 'প্রতিভা বলে কিছুই নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যাও, তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে। ডালটন স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, "লোকে আমাকে প্রতিভাবান বলে, কিন্তু আমি পরিশ্রম ছাড়া কিছুই জানি না।” প্রতিভাবান হওয়ার মূল চালিকাশক্তি অধ্যবসায়।
ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব : ছাত্ররাই যেহেতু দেশের ভবিষ্যত কর্ণধার সেহেতু তাদের জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব সর্বাধিক। ছাত্রজীবন আর অধ্যবসায় মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। বিদ্যার্জনের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। অলস, কর্মবিমুখ ও হতাশ ছাত্র-ছাত্রী বিদ্যালাভে সফলতা অর্জন করতে পারে না। একজন অধ্যবসায়ী ছাত্র বা ছাত্রীকে হতাশ না হয়ে পুনরায় দ্বিগুণ উৎসাহ-উদ্দীপনায় অধ্যবসায়ে মনোযোগী হতে হয় ।
জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব : কোনো সভ্যতাই একবারে গড়ে ওঠেনি। বারবার চেষ্টা ও সাধনার দ্বারাই সম্ভাবনার ভিত্তি রচনা করতে হয়। সৃষ্টির প্রথম মানবগোষ্ঠীর সভ্যতাও স্তরে স্তরে গড়ে উঠেছে। বস্তুত সামগ্রিকভাবে একটি জাতির সগৌরবে আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য সকল নাগরিকেরই অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়োজন। পৃথিবীর বুকে মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে তখনই সগৌরবে আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ করা সম্ভব যখন জাতীয় উন্নয়নে দলমত নির্বিশেষে সবাই সর্বশক্তি দিয়ে আত্মনিয়োগ করে । তাই জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম ।
অধ্যবসায় ও উন্নত বিশ্ব : উন্নত বিশ্ব আজ অধ্যবসায়ের বলে সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছেছে। জাপান, কোরিয়া, আমেরিকা, কানাডা, কেবল অধ্যবসায়ের গুণেই উন্নতির শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। আমরা বাঙালি জাতি। দুঃখজনক হলেও একথা সত্য যে, আমরা বহু অধ্যবসায়ের স্বাক্ষর রেখেছি আমাদের বাংলাদেশ ভূখণ্ডের স্বাধীনতার জন্য । কিন্তু আজ ঐ অধ্যবসায়ের গুণটি অনুপস্থিত রয়েছে আমাদের জাতীয় উন্নতিতে। আমাদের নেই কোনো প্রচেষ্টা, উদ্যম, আগ্রহ। বরং আছে আস্ফালন, হুঙ্কার, গরিমা ও নিজেকে প্রকাশ করার মিথ্যে বাহাদুরি। শুধু অধ্যবসায়ের অভাবে আমরা উন্নত বিশ্ব থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি ক্রমাগত ।
উপসংহার : 'মন্ত্রের সাধন, কিংবা শরীর পাতন'- অধ্যবসায় সম্পর্কিত একটি পরম সত্য প্রবাদ। যে ব্যক্তি অধ্যবসায়ী নয়, সে জীবনের কোনো সাধারণ কাজেও সফলতা লাভ করতে পারে না। জীবনের সফলতা এবং বিফলতা অধ্যবসায়ের ওপরই নির্ভর করে। তাই আমাদের উচিত অধ্যবসায়ের মতো মহৎ গুণটিকে আয়ত্ত করা, পরশ পাথরের মতো এই পাথরটিকে ছুঁয়ে দেখা এবং সোনার কাঠির মতো একে অর্জন করা। এক কথায় বলা যায়, অধ্যবসায়ই জীবন, জীবনই অধ্যবসায়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ অধ্যবসায় - প্রবন্ধ রচনা
শিক্ষার্থীরা আজকে আমরা জানলাম অধ্যবসায় - প্রবন্ধ রচনা সম্পর্কে । যদি আজকের এই অধ্যবসায় - প্রবন্ধ রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ । Search-Asked BD
Post a Comment