সূচনা: সাফল্য লাভের জন্যে বার বার চেষ্টা বা সংগ্রাম করার নামই অধ্যবসায়। অন্তহীন সংগ্রামের ইতিহাসে অধ্যবসায়ী মানুষ চিরস্মরণীয়। জীবনের বিকাশের মূলে রয়েছে যে অভিব্যক্তিবাদ বা বিবর্তনবাদ, তা সেই সংগ্রামেরই কাহিনি। বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে আজ অন্যতম মানবিক গুণ হচ্ছে অধ্যবসায়। অধ্যবসায়ের বলেই মানুষ পৃথিবী থেকে অসম্ভব কথাটি বিতাড়িত করেছে
অধ্যবসায়
সি বো. ১৭; চ. বো. ১৬৭. বো. ১৬. বো. ১৭১৬ 2012/
সূচনা: সাফল্য লাভের জন্যে বার বার চেষ্টা বা সংগ্রাম করার নামই অধ্যবসায়। অন্তহীন সংগ্রামের ইতিহাসে অধ্যবসায়ী মানুষ চিরস্মরণীয়। জীবনের বিকাশের মূলে রয়েছে যে অভিব্যক্তিবাদ বা বিবর্তনবাদ, তা সেই সংগ্রামেরই কাহিনি। বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে আজ অন্যতম মানবিক গুণ হচ্ছে অধ্যবসায়। অধ্যবসায়ের বলেই মানুষ পৃথিবী থেকে অসম্ভব কথাটি বিতাড়িত করেছে।
অধ্যবসায় কী: 'অধ্যবসায়' শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো অবিরাম সাধনা। কোনো কাজে সফলতা অর্জনের লক্ষ্যে ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা ধারণের মধ্য দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা করার নামই অধ্যবসায়। মূলত অধ্যবসায় হলো কিছু গুণের সমষ্টি। উদ্যম, উদ্যোগ, নিরন্তর কর্মপ্রচেষ্টা আর আন্তরিকতার মাধ্যমে অধ্যবসায় পরিপূর্ণতা পায়।
অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা: মানবজীবনের সাফল্যের অন্যতম হাতিয়ার অধ্যবসায়। সংগ্রামে জয় আছে, পরাজয় আছে। কিন্তু পরাজয়ই শেষ কথা নয়, পরাজয় হচ্ছে জয়েরই পথিকৃৎ। অতএব ধৈর্য ধরো, ধৈর্য ধরো, বাঁধো বাধো বুক।' বার বার চেষ্টার ফলেই মানুষের ভাগ্যাকাশে সাফল্যের ধ্রুবতারা ওঠে। অধ্যবসায়ের গুণেই মানুষ বড়ো হয়, অসাধ্য সাধন করতে পারে। জগতে বড় বড় শিল্পী, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক, সেনানায়ক, ধর্মপ্রবর্তক সবাই ছিলেন অধ্যবসায়ী। তাই মানবজীবনের প্রতিটি স্তরে অধ্যবসায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ছাত্রজীবনেও সফলতা অর্জনে অধ্যবসায়ের মূল্য অপরিসীম। গভীর আত্মপ্রত্যয় সহকারে অবিরাম অনুশীলন করলে দুরূহ বিষয়ও আয়ত্তে এসে যায়। এ রকম প্রতিটি ক্ষেত্রেই অবিচল অধ্যবসায় মানুষকে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দেয়।
মানবজীবনে অধ্যবসায়: সভ্যতার সেই অস্ফুট মুহূর্ত থেকে যে সংগ্রাম শুরু হয়েছিল, আজও তা শেষ হয়নি। এ সংগ্রামই মানুষের অভিজ্ঞানপত্র। জীবনযুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে প্রয়োজন সাহস ও অধ্যবসায়। এ শক্তিই মানুষের মহৎ চারিত্রিক লক্ষণ। দুর্বলচিত্ত মানুষ কখনো অধ্যবসায়ী হতে পারে না। কারণে-অকারণে সামান্য প্রতিকূল আঘাতেই তার ধৈর্যচ্যূতি ঘটে। যারা দৃঢ়চিত্ত, অধ্যবসায় তাদেরই চরিত্রের মহৎ মানবিক গুণ। শান্ত চিত্তে প্রতিকূলতাকে জয় করার মূলে আছে অধ্যবসায়। অন্য সকল মানবিক সদগুণের মতোই জীবনে অধ্যবসায়েরও সযত্ন লালন, পরিচর্যা প্রয়োজন। নিরন্তর অনুশীলনেই এ বৃত্তির বিকাশ ঘটে।
ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়: ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ের প্রয়োজন সর্বাধিক। ছাত্ররা সমাজের ভাবী গৌরবকেতন। বিশ্বের কোটি কোটি বঞ্চিত ভাগ্যাহত মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। অল্প মেধাশক্তিসম্পন্ন হলেও অধ্যবসায়ী ছাত্র সাফল্য লাভ করতে পারে। কাজেই অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীকে হতাশ না হয়ে পুনরায় দ্বিগুণ উৎসাহে অধ্যয়নে মনোনিবেশ করতে হবে। কারণ অধ্যবসায়ই পারে ব্যর্থতার গ্লানি মুছে দিয়ে সাফল্যের পথ দেখাতে।
অধ্যবসায় ও প্রতিভা: অধ্যবসায় প্রতিভার চেয়েও শ্রেয়। অনেকে প্রতিভাকে সফলতার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এটি ভুল ধারণা। কেননা প্রতিভাবান ব্যক্তি উদ্যমহীন হয়ে বসে থাকলে কখনোই সাফল্য লাভে সক্ষম হবে না। অধ্যবসায়ের জোরেই মানুষের প্রতিভার সঠিক প্রকাশ ঘটে। অধ্যবসায় ছাড়া তাই প্রতিভা অর্থহীন। বিশ্বের বিখ্যাত অনেক মনীষী তাঁদের সাফল্যের মূলে প্রতিভা নয়, বরং নিরলস পরিশ্রমকেই চিহ্নিত করেছেন। মনীষী ভলতেয়ারের ভাষায়, 'প্রতিভা বলে কোনো কিছু নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যাও, তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে।
দৃষ্টান্ত: অধ্যবসায়ী ব্যক্তি মানবজন্মকে সার্থক করে তোলেন। অনেক বাধা-বিপত্তির মধ্য দিয়েই তারা কর্মের পথে এগিয়ে যান অবিচল নিষ্ঠায়। ত্যাগে, ধৈর্যে তাঁরা মানুষের কাছে তুলে দিয়েছেন অমৃতের পাত্র। সেই নীলকণ্ঠ মহামানবের পুণ্য-স্পর্শে সাধারণ মানুষের জীবন ধন্য হয়েছে। রাজার দুলাল গৌতম বুদ্ধও একদিন জীবনের সত্য সন্ধান করতে গিয়ে সুখের স্বর্গ-সিংহাসন থেকে নেমে গিয়েছিলেন পথের ধুলোয়। প্রতিকূলতাকে তিনি জয় করেছিলেন অসীম ত্যাগ আর তিতিক্ষায়। অধ্যবসায়ই ছিল তাঁর সেদিনের মন্ত্র। মহানবি হযরত মুহম্মদ (স)-এর জীবনে দুঃখ-কষ্টের আঘাত কম ছিল না। সহনশীলতা মানুষের জীবনকে যে কী পরিমাণে সত্যের আলোকে উদ্ভাসিত করতে পারে, তাঁদের জীবনই এর প্রমাণ। করুণা-সাগর বিদ্যাসাগরের সমুন্নত মহিমা, সহিষ্ণুতার আদর্শেই প্রোজ্জ্বল। এ ছাড়া সাহিত্য-শিল্প-বিজ্ঞান সাধনায়ও মানুষের অধ্যবসায়ের তুলনা নেই। ম্যাক্সিম গোর্কি, দস্তয়েভস্কি জীবনে কি কম দুঃখ পেয়েছিলেন? রবীন্দ্রনাথও কি কম নিন্দা-সমালোচনার শরবাণে জর্জরিত হয়েছিলেন? চরম দারিদ্র্য ও হতাশার মধ্যেও কত কবি-সাহিত্যিক সুন্দরের আরাধনা করে গেছেন । এমনই কত বিজ্ঞানীকেও বার বার অধ্যবসায়ের অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছে। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস অধ্যবসায়ের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। ইংরেজদের সাথে পরপর ছয় বার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তিনি পুনরায় সৈন্য সংগ্রহ করে শত্রুর হাত থেকে স্বদেশের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করেছিলেন।
উপসংহার: অধ্যবসায়ই মানুষকে পৃথিবীতে স্মরণীয়-বরণীয় করে রাখতে পারে। তাই আমাদের অধ্যবসায়ী হতে হবে। যারা সংকল্পে অটল, জীবন যাদের প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ তাদের কাছে অসাধ্য কিছুই নেই। একমাত্র অধ্যবসায়ের গুণেই মানুষ নিজের জীবনকে সুষমামণ্ডিত করে দেশ ও জাতির কাছে স্মরণীয়-বরণীয় হতে পারে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ অধ্যবসায় - প্রবন্ধ রচনা
শিক্ষার্থীরা আজকে আমরা জানলাম অধ্যবসায় - প্রবন্ধ রচনা সম্পর্কে । যদি আজকের এই অধ্যবসায় - প্রবন্ধ রচনা টি ভালো লাগে তাহলে এখনি ফেসবুকে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন আর এই রকমই নিত্যনতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ । Search-Asked BD
Post a Comment