সমাসের প্রকারভেদ
বিভিন্ন নিয়ম ও পদ্ধতিতে সমাসবদ্ধ পদ গঠিত হয়। সমাসবদ্ধ পদ গঠনে কমপক্ষে দুটি পদের প্রয়োজন। এ দুটি পদের প্রথমটিকে বলা হয় পূর্বপদ ও অপরটিকে বলা হয় পরপদ ৷ সমাস সাধারণত ছয় প্রকার । যথা :
৩. তৎপুরুষ সমাস
৪. বহুব্রীহি সমাস
৫. অব্যয়ীভাব সমাস
৬. দ্বিগু সমাস।
২. কর্মধারয় সমাস : কর্মধারয় সমাস পরপদ প্রধান সমাস। এ সমাসে সমস্যমান পদ দুটি বিশেষ্য ও বিশেষ্য, বিশেষ্য ও বিশেষণ, বিশেষণ ও বিশেষণ হতে পারে। পরপদের প্রাধান্য এ সমাসে বেশি থাকে।
উদাহরণ : মহান যে রাজা = মহারাজ, শশকের ন্যায় ব্যস্ত = শশব্যস্ত, চালাক অথচ চতুর = চালাক-চতুর, চন্দ্রের ন্যায় মুখ = চন্দ্ৰমুখ।
এখানে প্রথম উদাহরণে বিশেষণ ও বিশেষ্য, দ্বিতীয় উদাহরণে বিশেষ্য ও বিশেষণ, তৃতীয় উদাহরণে বিশেষণ ও বিশেষণ এবং চতুর্থ উদাহরণে বিশেষ্য ও বিশেষ্য পদ মিলে সমাস হয়েছে। তবে প্রধানত বিশেষ্য ও বিশেষণ পদ মিলে কর্মধারয় সমাস হয়ে থাকে এবং বিশেষ্য পদের প্রাধান্য থাকে। একাধিক কর্মধারয় সমাস আছে। যথা—উপমান কর্মধারয়, উপমিত কর্মধারয়, রূপক কর্মধারয় ও মধ্যপদলোপী কর্মধারয় ।
যার সাথে কোনো পদের তুলনা করা হয় সে পদকে উপমান পদ এবং যে পদকে তুলনা করা হয় সে পদকে উপমেয় পদ বলে।
ক. উপমান কর্মধারয় : উপমান পদের সাথে সাধারণ ধর্মবাচক পদের (বিশেষণ) যে সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলা হয় । যেমন— গজের মতো মূর্খ = গজমূর্খ। এখানে ‘গজ' উপমান পদ এবং ‘মূর্খ’ সাধারণ ধর্মবাচক পদ ।
খ. উপমিত কর্মধারয় : উপমেয় পদের সাথে উপমান পদের যে সমাস হয়। তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন- চাঁদের ন্যায় মুখ = চাঁদমুখ । এখানে 'চাঁদ' উপমান পদ এবং ‘মুখ’ উপমেয় পদ।
গ. রূপক কর্মধারয় : পরস্পরের মধ্যে অভেদ কল্পনা করে উপমেয় পদের সাথে উপমান পদের যে সমাস হয় তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। এ সমাসের সমস্যমান পদ দুটি রূপ” শব্দ দ্বারা ব্যাসবাক্যে যুক্ত থাকে। যেমন— মন রূপ মাঝি = মনমাঝি; বিষাদ রূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধ; বিদ্যা রূপ ধন = বিদ্যাধন ।
ঘ. মধ্যপদলোপী কর্মধারয় : যে কর্মধারয় সমাসের ব্যাসবাক্যের মধ্যবর্তী পদটি লোপ পেয়ে সমাসবদ্ধ পদ তৈরি হয় তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলা হয়। যেমন— পল মিশ্রিত অনু = পলান্ন; ঘি মাখা ভাত = ঘি- ভাত ৷
ব্যাসবাক্য (Base Sentence) | সমাসবদ্ধ পদ (Compound Word) |
---|---|
প্রিয় যে সখা | প্রিয়সখা |
নীল যে উৎপল | নীলোৎপল |
ফুল যে বাবু | ফুলবাবু |
নীল যে পদ্ম | নীলপদ্ম |
ফুল যে শার্ট | ফুলশার্ট |
নীল যে কণ্ঠ | নীলকণ্ঠ |
হাফ যে মোজা | হাফমোজা |
লাল যে গোলাপ | লালগোলাপ |
পরম যে ঈশ্বর | পরমেশ্বর |
লাল যে সালু | লালসালু |
নব যে পল্লব | নবপল্লব |
শ্বেত যে হস্তী | শ্বেতহস্তী |
জঙ্গি যে বিমান | জঙ্গিবিমান |
বীর যে পুরুষ | বীরপুরুষ |
যিনি লাট তিনি সাহেব | লাটসাহেব |
ওলের ন্যায় কপি | ওলকপি |
যিনি রাজা তিনি ঋষি | রাজর্ষি |
ফুলের ন্যায় কুমারী | ফুলকুমারী |
যে বট সেই বৃক্ষ | বটবৃক্ষ |
চাঁদের ন্যায় মুখ | চাঁদমুখ |
যিনি ডাক্তার তিনি সাহেব | ডাক্তারসাহেব |
অধর পল্লবের ন্যায় | অধরপল্লব |
সিদ্ধ যে আলু | আলুসিদ্ধ |
কর পল্লবের ন্যায় | করপল্লব |
ভর্তা যে আলু | আলুভর্তা |
পুরুষ সিংহের ন্যায় | পুরুষসিংহ |
নিচে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে আরো কিছু সমাসবদ্ধ পদ দেওয়া হলো :
ব্যাসবাক্য (Base Sentence) | সমাসবদ্ধ পদ (Compound Word) |
---|---|
যা কাঁচা তা মিঠা | কাঁচামিঠা |
বিড়ালের মতো তপস্বী | বিড়ালতপরী |
যা মিঠা তা কড়া | মিঠাকড়া |
গো-এর মতো বেচারি | গোবেচারি |
যে মান্য সে গণ্য | মান্যগণ্য |
বকের মতো ধার্মিক | বকধার্মিক |
নীল যে আকাশ | নীলাকাশ |
গজের মতো মূর্খ | গজমূর্খ |
গণ্ডের মতো মূর্খ | গণ্ডমূর্খ |
পুণ্য যে ভূমি | পুণ্যভূমি |
পণ্ডিত হয়েও মূর্খ | পণ্ডিতমূর্খ |
কুসুমের মতো কোমল | কুসুমকোমল |
মহান যে আশয় | মহাশয় |
তুষারের মতো ধবল | তুষারধবল |
মহান যে রাজা | মহারাজ |
শশকের ন্যায় ব্যস্ত | শশব্যস্ত |
ডুবো যে জাহাজ | ডুবোজাহাজ |
বৌ পরিবেশন করা ভাত | বৌভাত |
পানা আচ্ছাদিত পুকুর | পানাপুকুর |
ঘি মাখা ভাত | ঘি-ভাত |
জীবন রক্ষার জন্য বিমা | জীবনবিমা |
বিষাদ রূপ সিন্ধু | বিষাদসিন্ধু |
মোম নির্মিত বাতি | মোমবাতি |
ভব রূপ নদী | ভবনদী |
বিয়ের জন্য পাগল | বিয়েপাগল |
মোহ রূপ নিদ্ৰা | মোহনিদ্রা |
সিংহ চিহ্নিত আসন | সিংহাসন |
শোক রূপ অনল | শোকানল |
পল মিশ্রিত অনু | পলান্ন |
দিলদরিয়া | দরিয়া রূপ দিল |
দুধসাগু | দুধ মিশ্রিত সাগু |
প্রাণপাখি | প্রাণ ৰূপ পাখি |
Post a Comment