সমাস

‘সমাস' শব্দটি সংস্কৃত শব্দ। সম + আস্ + অ = সমাস। সমাসের আভিধানিক অর্থ ‘একত্রে অবস্থান'। পরস্পর অর্থ-সঙ্গতিপূর্ণ দুই বা ততোধিক পদ মিলে এক পদ হওয়াকে সমাস বলে।

যে কয় পদ মিলে সমাস হয় তাদের প্রত্যেকটিকে সমস্যমান পদ বলা হয় এবং সমাস সাধিত পদটিকে সমস্ত পদ বা সমাসবদ্ধ পদ বলে। সমাসবদ্ধ পদকে বিস্তৃত করলে অর্থাৎ যে বাক্যাংশ থেকে সমাসবদ্ধ পদ তৈরি হয় তাকে ব্যাসবাক্য বলা হয়। নিচের উদাহরণটি লক্ষ করো।

'সিংহ চিহ্নিত আসন' = সিংহাসন।

এখানে 'সিংহ চিহ্নিত আসন' ব্যাসবাক্য, “সিংহাসন' সমাসবদ্ধ বা সমস্ত পদ এবং ‘সিংহ' ও ‘আসন' পদ দুটির প্রত্যেকটি সমস্যমান পদ ।

সমাসের প্রকারভেদ

বিভিন্ন নিয়ম ও পদ্ধতিতে সমাসবদ্ধ পদ গঠিত হয়। সমাসবদ্ধ পদ গঠনে কমপক্ষে দুটি পদের প্রয়োজন। এ দুটি পদের প্রথমটিকে বলা হয় পূর্বপদ ও অপরটিকে বলা হয় পরপদ ৷ সমাস সাধারণত ছয় প্রকার । যথা :

১. দ্বন্দ্ব সমাস

২. কর্মধারয় সমাস

৩. তৎপুরুষ সমাস

৪. বহুব্রীহি সমাস

৫. অব্যয়ীভাব সমাস

৬. দ্বিগু সমাস।


১. দ্বন্দ্ব সমাস : দ্বন্দ্ব সমাস উভয় পদ প্রধান সমাস। যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর সকলেরই সমাসবদ্ধ পদে প্রাধান্য থাকে, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলা হয়। দ্বন্দ্ব সমাসের ব্যাসবাক্যে এবং, ও, আর-এ তিনটি অব্যয় থাকে। এ অব্যয়গুলো লোপপ্রাপ্ত হয়ে সমস্যমান পদগুলো একটি পদে পরিণত হয় ৷

২. কর্মধারয় সমাস : কর্মধারয় সমাস পরপদ প্রধান সমাস। এ সমাসে সমস্যমান পদ দুটি বিশেষ্য ও বিশেষ্য, বিশেষ্য ও বিশেষণ, বিশেষণ ও বিশেষণ হতে পারে। পরপদের প্রাধান্য এ সমাসে বেশি থাকে।

 উদাহরণ :  মহান যে রাজা = মহারাজ, শশকের ন্যায় ব্যস্ত = শশব্যস্ত, চালাক অথচ চতুর = চালাক-চতুর, চন্দ্রের ন্যায় মুখ = চন্দ্ৰমুখ।

এখানে প্রথম উদাহরণে বিশেষণ ও বিশেষ্য, দ্বিতীয় উদাহরণে বিশেষ্য ও বিশেষণ, তৃতীয় উদাহরণে বিশেষণ ও বিশেষণ এবং চতুর্থ উদাহরণে বিশেষ্য ও বিশেষ্য পদ মিলে সমাস হয়েছে। তবে প্রধানত বিশেষ্য ও বিশেষণ পদ মিলে কর্মধারয় সমাস হয়ে থাকে এবং বিশেষ্য পদের প্রাধান্য থাকে। একাধিক কর্মধারয় সমাস আছে। যথা—উপমান কর্মধারয়, উপমিত কর্মধারয়, রূপক কর্মধারয় ও মধ্যপদলোপী কর্মধারয় । 

যার সাথে কোনো পদের তুলনা করা হয় সে পদকে উপমান পদ এবং যে পদকে তুলনা করা হয় সে পদকে উপমেয় পদ বলে।


ক. উপমান কর্মধারয় : [চ. বো. ১০] উপমান পদের সাথে সাধারণ ধর্মবাচক পদের (বিশেষণ) যে সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলা হয় । যেমন— গজের মতো মূর্খ = গজমূর্খ। এখানে ‘গজ' উপমান পদ এবং ‘মূর্খ’ সাধারণ ধর্মবাচক পদ ।

খ. উপমিত কর্মধারয় : উপমেয় পদের সাথে উপমান পদের যে সমাস হয়। তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন- চাঁদের ন্যায় মুখ = চাঁদমুখ । এখানে 'চাঁদ' উপমান পদ এবং ‘মুখ’ উপমেয় পদ।

গ. রূপক কর্মধারয় : পরস্পরের মধ্যে অভেদ কল্পনা করে উপমেয় পদের সাথে উপমান পদের যে সমাস হয় তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। এ সমাসের সমস্যমান পদ দুটি রূপ” শব্দ দ্বারা ব্যাসবাক্যে যুক্ত থাকে। যেমন— মন রূপ মাঝি = মনমাঝি; বিষাদ রূপ সিন্ধু = বিষাদসিন্ধ; বিদ্যা রূপ ধন = বিদ্যাধন ।

ঘ. মধ্যপদলোপী কর্মধারয় : যে কর্মধারয় সমাসের ব্যাসবাক্যের মধ্যবর্তী পদটি লোপ পেয়ে সমাসবদ্ধ পদ তৈরি হয় তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলা হয়। যেমন— পল মিশ্রিত অনু = পলান্ন; ঘি মাখা ভাত = ঘি- ভাত ৷


৩ . তৎপুরুষ সমাস : পূর্বপদের দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী ও সপ্তমী বিভক্তির লোপ হয়ে যে সমাস হয় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলা হয়। 


৪. বহুব্রীহি সমাস : বহুব্রীহি সমাস একটি ব্যতিক্রমধর্মী সমাস। এটা অন্যপদ প্রধান। যে কয় পদ মিলে সমাস হয় তার কোনোটিকে না বুঝিয়ে অন্য কিছুকে বোঝায়। যে সমাসের সমাসবদ্ধ পদ সমস্যমান পদগুলোর কোনোটিকে না বুঝিয়ে অন্য কোনো পদকে বোঝায় অর্থাৎ অন্য পদের প্রাধান্য থাকে, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলা হয় ।

যেমন— পঙ্কে জন্মে যা = পঙ্কজ; এখানে পঙ্কজ শব্দে 'পঙ্ক' (কাদা) ও “জন্ম' পদ দুটির কোনোটির প্রাধান্য না থেকে পদ্মফুলকে বোঝানো হয়েছে । অনুৰূপ— দশ আনন যার = ‘দশানন' শব্দটি রাজা রাবণকে বোঝায়; নীল কণ্ঠ যার = “নীলকণ্ঠ' শব্দটি শিবকে বোঝায়। আবার, পুণ্য আত্মা যার = ‘পুণ্যাত্মা” বলতে কোনো ব্যক্তিকে বোঝায়; লাল পাড় যার = 'লালপেড়ে’ শব্দটি একখানা কাপড়ের কথা বোঝায়।

নঞ বহুব্রীহি সমাস : যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদে না-বোধক অব্যয় থাকে তাকে ন বহুব্রীহি সমাস বলে। এ ক্ষেত্রে অব্যয়ের প্রাধান্য থাকে না। যেমন— ভুল নাই যাতে = নির্ভুল, নয় সরকারি যা = বেসরকারি, নাই আদব যার = বেয়াদব ইত্যাদি ।


৫. অব্যয়ীভাব সমাস : অব্যয়ীভাব পূর্বপদ প্রধান সমাস। যে সমাসে পূর্বপদে অব্যয় থাকে এবং সমাসবদ্ধ পদে অব্যয়ের প্রাধান্য থাকে, তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমন— দিন দিন। প্রতিদিন; এখানে প্রতি (প্রত্যেক) অব্যয়ের প্রাধান্য আছে।


৬. দ্বিগু সমাস : যে সমাসের পূর্বপদে সংখ্যাবাচক শব্দ থাকে এবং ব্যাসবাক্যে ‘সমাহার’ শব্দ থাকে, তাকে দ্বিগু সমাস বলে।


অন্যান্য সমাস : উল্লিখিত ছয়টি সমাস ছাড়াও আরো কয়েকটি সমাস বাংলা ব্যাকরণে দেখা যায় ।

১. নিত্য সমাস : যে সমাসে পদগুলো সর্বদাই (নিত্য) সমাসবদ্ধ থাকে, তাকে নিত্য সমাস বলে।

২. প্রাদি সমাস : এ উপসর্গযোগে যে সমাস গঠিত হয়, তাকে প্রাদি সমাস বলে। যেমন- 

প্রভাত = : প্রকৃষ্ট রূপে ভাত ৷

প্রকাশ = প্রকৃষ্ট রূপে কাশ ।

৩. সুপসুপা সমাস : বিভক্তিযুক্ত নামপদের সাথে বিভক্তিযুক্ত অন্য পদের সমাসকে সুপ্‌পা সমাস বলে। যেমন— ভূতপূর্ব = পূর্বে ভূত।

সমাস ,সমাস কাকে বলে,সমাস কত প্রকার,সেতার কোন সমাস,ব্যাসবাক্য সহ সমাস,গায়ে হলুদ কোন সমাস,সমাস শব্দের অর্থ কি,সমাস চেনার সহজ উপায়,মুজিববর্ষ কোন সমাস,দ্বন্দ্ব সমাস,তপোবন কোন সমাস,তেপায়া কোন সমাস,আমরা কোন সমাস,ইত্যাদি কোন সমাস,ব্যাসবাক্যসহ সমাস নির্ণয়,বহুব্রীহি সমাস,শশব্যস্ত কোন সমাস,মৌমাছি কোন সমাস,সমাস নির্ণয় কর,হাতাহাতি কোন সমাস,নদীমাতৃক কোন সমাস,তেপান্তর কোন সমাস,কুশীলব কোন সমাস,উপমান কর্মধারয় সমাস কোনটি,পুষ্পসৌরভ কোন সমাস,সমাস কাকে বলে ও কত প্রকার,পকেটমার কোন সমাস,পঙ্কজ কোন সমাস,চিরসুখী কোন সমাস,দম্পতি কোন সমাস,কর্মধারয় সমাস,হাট বাজার কোন অর্থে দ্বন্দ্ব সমাস,তৎপুরুষ সমাস,নীলাম্বর কোন সমাস,সমাস উদাহরণ,সমাস কত প্রকার ও কি কি,বিরানব্বই কোন সমাস,সমাস কয় প্রকার,সপ্তর্ষি কোন সমাস,হাতাহাতি কোন সমাসের উদাহরণ,মুক্তিযুদ্ধ কোন সমাস,উপপদ তৎপুরুষ সমাস,সমাস কি,যথারীতি কোন সমাস,কানাকানি কোন সমাস,সমাসের উদাহরণ,অপয়া কোন সমাস,স্মৃতিসৌধ কোন সমাস,সমাস কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী,ক্ষুধিত পাষাণ কোন সমাস,সিংহাসন কোন সমাস,রাজপথ কোন সমাস,ক্রিসমাস ট্রি,মহানবী কোন সমাস,সহোদর কোন সমাস,আলুনি কোন সমাস,উদ্বেল কোন সমাস,ব্যাসবাক্য সহ সমাস pdf,নরাধম কোন সমাস,জজ সাহেব কোন সমাস,গৃহস্থ কোন সমাস,অব্যয়ীভাব সমাস,নবরত্ন কোন সমাস,শতাব্দী কোন সমাস,কাজল কালো কোন সমাস,গোঁফ খেজুরে কোন সমাস,সমাস mcq,ত্রিফলা কোন সমাস,অহিনকুল কোন সমাস,রাজপুত্র কোন সমাস,দ্বিগু সমাস,বাগদত্তা কোন সমাস,মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাসের উদাহরণ,ক্রিসমাস ডে,অনুতাপ কোন সমাস,সমাস নিষ্পন্ন পদটির নাম কি,হাতেখড়ি কোন সমাস,নিত্য সমাস,প্রাদি সমাস,মুজিব বর্ষ কোন সমাস,কালসাপ কোন সমাস,চিকিৎসাশাস্ত্র কোন সমাস,কালান্তর কোন সমাস,ইহকাল কোন সমাস,বীণাপাণি কোন সমাস,সপ্তাহ কোন সমাস,বেতার কোন সমাস,সমাস pdf,চাঁদমুখ কোন সমাসের উদাহরণ,কাজলকালো কোন সমাস,চন্দ্রমুখ কোন সমাস,ক্রিসমাস ফেভারিটস,প্রিয়ংবদা কোন সমাস,উপমিত কর্মধারয় সমাসের উদাহরণ,সমাস কত প্রকার ২০২২,চৌচালা কোন সমাস,সমাসের মাধ্যমে গঠিত হয়,চৌরাস্তা কোন সমাস,অরুণরাঙা কোন সমাস,হাট-বাজার কোন অর্থে দ্বন্দ্ব সমাস

Post a Comment

Previous Post Next Post